কাজী নাফিস ফুয়াদ, মাদারীপুর প্রতিনিধিঃ
চোখ নিয়ে জন্ম গ্রহন করেও অন্ধত্ব হতে হয়েছে হাফেজ রাসেলকে(৩২)। কিন্তু ৩ বছর বয়সের সময় মায়ের মৃত্যুতে কান্না করতে করতে তার দুটি চোখের দৃষ্টি হারিয়ে যায়। এলাকায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কোরআনের হাফেজ রাসেলকে কমবেশি সবাই চেনে।সেই অন্ধ হাফেজ জীবিকা নির্বাহের জন্য রাস্তায় রাস্তায়,হাটে বাজারে গ্রামগঞ্জে ঘুরে ঘুরে ফেরি করে মাথা ব্যাথার মলন, দাঁতের মাঝন বিক্রি করেন।তাও ঠিকমত বিক্রি করতে পারে না। রাস্তায় একা চলাচল করতে গিয়ে শিকার হয়েছেন অনেক দুর্ঘটনার।মরণকে উপেক্ষা করেও ফেরি করে যা পায় তাতে সংসার চলা তো দূরের কথা নিজেই বেঁচে থাকাই কষ্টসাধ্য। মানুষের কাছে হাত না পেতেই নিজেই সাবালম্বি হতে চেয়েছেন অন্ধ এই হাফেজ। তার স্বপ্ন একটি মাদরাসা তৈরি করা। সরকার ও বৃত্তশালীরা চাইলেই পূরণ করতে পারে অন্ধ হাফেজ রাসেলের অপ্রত্যাশিত স্বপ্ন।
মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলা চর ঠেঙ্গামারা গ্রামে মৃত্যু আব্দুল আদেল বেপারীর ছেলে অন্ধ হাফেজ আবুল হাসান রাসেল। তার জন্মের তিন বছর পরে মা মারা যায়। মায়ের মৃত্যুর শোক যেতে না যেতেই তার পাঁচ বছর বয়সেই বাবা মারা যান।পরে তার বড় ভাই ও বড় ভাইয়ের স্ত্রী তাকে লালন পালন করেন। এদিকে মা ও বাবার জন্য কান্না করতে করতে চোখের দৃষ্টি হারিয়ে যায় পাঁচ বছর বয়সেই।পরে তার চাচাতো ভাই তাকে ডাসার হাফিজিয়া এতিমখানা মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেয়।সেখান থেকে শুনামের সাথে দীর্ঘ সাত বছর পড়াশোনা করে হাফেজ হয়েছেন তিনি।পরে একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতার পাশাপাশি একটি মসজিদের মোয়াজ্জিন হিসেবে কিছুদিন কাজ করেছিলেন। অন্ধ হওয়ায় সেই খেদমতের কাজও চলে যায়। পরে টোরকি মাজার মসজিদে খেদমতের কাজ নিয়েও সেখানেও বেশিদিন করতে পারেনি। স্ত্রী ও এক ছেলের খরচের কথা চিন্তা করে কোন উপায় না পেয়ে ফেরি করে করে এসকল বিষয় বিক্রি কোনমতে জীবন যাপন করেন।যেখানে একটা মানুষের প্রতি মাসে হাত খরচ হিসেবে লাগে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা।আল্লাহর রহমতে সেখানে ২-৩ হাজার টাকায় চালায় সংসার।
এই অন্ধ হাফেজ রাসেলের সাহায্যের জন্য আবেদন জানিয়েছেন স্থানীয় ও তার স্বজন ও এলাকাবাসী।
অন্ধ হাফেজ আবুল হাসান রাসেল বলেন, আমি অন্ধ হাফেজ। চোখে দেখি না। আমার বাড়িতে একটু জমি আছে, ঘর দেওয়ার সামর্থ্য নাই। আপনারা আমাকে একটা যদি ঘর তুলে দেন। তাহলে সেই ঘরের এক পাশে আমি থাকবো আর এক পাশে একটা মাদ্রাসা নির্মাণ করতে চাই যা দিয়ে দ্বীনি শিক্ষা দেওয়া যাবে। আপনাদের প্রতি আমার দাবী ও আকুল আবেদন আপনারা আমাকে একটা ঘরের ব্যবস্থা করে দেন।
ডাসার এতিমখানা হাফেজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা মো. জুবায়ের হাসান জানান, আবুল হাসান রাসেল ডাসার এতিমখানা হাফিজিয়া মাদরাসা থেকে হাফেজ হয়েছে। সে আমাদের মাদ্রাসারই ছাত্র ছিল। আমরা তাকে আলিফ বা তা থেকে পড়েছি। সে একটা মসজিদে খেদমতে ছিল। খেদমত ছুটে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে। তার জমি আছে ঘর নাই তারে যদি একটা ঘরের ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে আল্লাহর রহমতে সেখানে মাদ্রাসা দিয়ে কোনরকম বাঁচতে পারবে।
এব্যাপারে কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার দাশ বলেন, অন্ধ হাফেজ রাসলের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে, উপজেলা প্রশাসন থেকে তাঁকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করার মাধ্যমে তিনি যাতে পাঠদানের মাধ্যমে সমাজের স্রোতের সাথে টিকে থাকতে পারে তার সুব্যবস্থা করা হবে।
মন্তব্য