জাবি প্রতিনিধি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৬টি আধুনিক হল নির্মান হলেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনার অভাবে শিক্ষার্থীরা দৈনন্দিন নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে৷
সর্বশেষ, এবছরের ১৮ ও ১৯ অক্টোবর যথাক্রমে ‘বীরপ্রতীক তারামন বিবি হল’ ও ‘জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। এর আগেও চালু করা হয়েছে ৪টি নতুন হল। নতুন হলগুলোতে পর্যাপ্ত সিসিটিভি ক্যামেরার অভাব, ডাইনিং ব্যবস্থাপনা না থাকা, নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব, টেবিল ল্যাম্প না দেওয়াসহ নানাবিধ অভিযোগ জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
কাজী নজরুল হলের ও ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের ৫২ ব্যাচের শিক্ষার্থী, এস এম আব্দুল্লাহ আলামিন বলেন, নতুন হলে এখনো ডাইনিং চালু হয়নি। হলে ক্যান্টিন থাকলেও সেখানে মানসম্মত খাবার নেই। রান্নাকৃত খাবারে ময়লা পাওয়া যায়। খাবারের দাম তুলনামূলক বেশি এবং পরিমানে অনেক কম দেওয়া হয়।
কাজী নজরুল হলের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৫২ ব্যাচের শিক্ষার্থী এইচ. এম অভি বলেন, প্রায় শতকোটি টাকা ব্যয়ে নবনির্মিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলের নির্দিষ্ট রুমগুলোর (A ব্লকের ১ এবং ১০ নাম্বার রুম এবং C ব্লকের ২১ এবং ৩০ নাম্বার রুম) নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। হল প্রশাসন এবং ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীলতার অভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ত্রুটি রয়েছে। সমস্যা : ক্যামেরা স্থাপনের ত্রুটি। মাঝের বিমের সাথে ক্যামেরা লাগানোর ফলে শুধুমাত্র একদিকের সার্ভিলেন্স সম্ভব হচ্ছে।ফলে,কিছু রুম নজরদারির বাইরে রয়ে যাচ্ছে। হলে চুরি বা অঘটন ঘটলে এর দায় কার এবং উদ্ধার কার্য পরিচালনা করা কঠিন হয়ে যাবে।
তারামন বিবি হলের মেহেরিন আফরিন বলেন : হলে সুলভমূল্যে খাবার পাওয়া যায়না। খাবারের দাম অনেক বেশি হলেও পরিমানে তুলনামূলক খুবই কম। এছাড়াও, ক্যাম্পাস বন্ধ থাকলে হলের শিক্ষার্থীদের কক্ষ ও মালামালের নিরাপত্তার দায় নিতে লিখিতভাবে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন ‘তারামন বিবি হল’ প্রশাসন। পানির ফিল্টার না থাকায় সুপেয় পানি পাওয়া যায়না। সবগুলো লিফট চালু থাকেনা।
নাজমুস সাকিব বলেন : অন্যান্য নতুন হলে ৬টি লিফট থাকলেও নজরুলে ৫টি লিফট দেওয়া হয়েছে। তারমধ্যে প্রায় সময়ই ২টি লিফট বন্ধ থাকে। এতে করে শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক চলাচল বাধাগ্রস্থ হয়।
কাজী নজরুল হলের ফরহাদ আহমেদ ফিরোজ বলেন : ওয়াশরুম নিয়মিত পরিষ্কার না করায় প্রায়সময়ই এগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে থাকে। ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। এছাড়াও, আগে উদ্বোধন হওয়া হলগুলোতে টেবিল ল্যাম্প দেওয়া হলেও নজরুল হলের ক্ষেত্রে তা হয়নি।
কাজী নজরুল হলের সানজিদ বলেন, বি ব্লকের ওয়াশরুমের পাশের লিফটটি এখনো চালু হয় নাই।
এখনো পর্যন্ত Indoor Game গুলি (যেমন:টেবিল টেনিস) এর কোনো ব্যবস্থা করা হয় নাই।
২১ নং হলের শিক্ষার্থী, ওয়ালি উল্লাহ আল মাহদি বলেন : মাঝে মাঝে লিফটের সামনের টাইলস ভেঙ্গে দরজায় আটকে থাকার ফলে লিফট হ্যাং হয়ে যায়। এখনো ডাইনিং চালু হয়নাই,যার ফলস্রুতিতে আমাদের খাবারের জন্য প্রতি বেলায় অন্য হলে/দোকানে যেতে হয়। অটোরিকশা বন্ধ করে শাটল চালানো হচ্ছে। আমাদের হলের সামনে শাটল আসতে পারেনা। সেজন্য ক্যাম্পাসে চলাচলে অনেক সমস্যা হয়। প্রশাসনের তদারকির অভাবে যত্রতত্র সাইকেল ও বাইক পার্কিং করা হয়। সিঁড়ির কিছু দরজার হাতল নষ্ট হয়ে গিয়েছে। চেয়ার-টেবিলে ফাটল ধরেছে। এগুলো সংস্কারের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হলের শিক্ষার্থী তারেক আহমেদ বলেন, হলের ডাইনিং চালু করা প্রয়োজন। প্রতিটি ফ্লোরে সুপেয় পানির ফিল্টার না থাকায় ভোগান্তি পোহাতে হয়। ওয়াশরুম নিয়মিত পরিষ্কার করা প্রয়োজন।
অভিযোগের বিষয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হল প্রাধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল্লাহ হেল কাফী বলেন : গ্যাস সাপ্লাই না থাকার কারণে ডাইনিং চালু করা সম্ভব হয়নি। হলে মাত্র দুজন সুইপার এবং একজন ক্লিনার। লোকবল কম থাকায় নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা সম্ভব হয়না।
লিফটের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে একটি লিফট কম দেওয়া হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে আরেকটি লিফট চালু হবে। প্রয়োজন সাপেক্ষে পাঁচটি লিফট চালানো হয়। আবার মাঝে মাঝে দুটা বন্ধ রাখা হয়। সাদ বন্ধের বিষয়ে করলে তিনি বলেন, অফিস টাইমে হলের সাদ খোলা রাখা হয়। অপ্রত্যাশিত ঘটনা এড়াতে রাতের বেলা সাদ বন্ধ রাখা হয়।
বীর প্রতিক তারামন বিবি হলের প্রাধ্যক্ষ ড. আবেদা সুলতানা বলেন : শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানে আমি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। এপর্যন্ত অনেক অসঙ্গতি ছিল যেগুলো আমি নিজ উদ্যোগে সমাধান করেছি। গ্যাস সাপ্লাই না থাকায় ডাইনিং চালু করা যায়নি। তার বিকল্প হিসেবে ক্যান্টিন চালু করা হয়েছে এবং সেটির খাবারের মান ও ব্যবস্থাপনা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছি। শিক্ষার্থীবান্ধব একটি হল উপহার দেওয়ার জন্য আমি আন্তরিক প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হলের প্রাধ্যক্ষ প্রফেসর লুৎফুল ইলাহি বলেন : লোকবল কম এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে কিছু ত্রুটি থাকায় ওয়াশরুম নিয়মিত পরিষ্কার করা সম্ভব হয়না। আমি ইতোমধ্যেই লোকবল নিয়োগের বিষয়ে প্রশাসনকে তাগাদা দিয়েছি এবং প্রকল্পের ত্রুটি সমাধানের জন্য দায়িত্বরতদের জানিয়েছি।
অভিযোগের বিষয়ে ২১নং হলের প্রভোস্ট ড. বোরহান উদ্দিন বলেন : আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর বিশেষ বিবেচনায় গ্যাস লাইন দেওয়ার আবেদন জানিয়েছি। যদি গ্যাস লাইন দেওয়া হয় তাহলে ডাইনিং চালু করা সম্ভব হবে। তবে আমি দায়িত্ব পাওয়ার পর হলে মেস সিস্টেম চালু করে সাময়িক সমাধানের চেষ্টা করেছি।
এছাড়াও বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন : হলের অভিযোগ বই আমি নিজে দেখি। যেকোনো অভিযোগ পেলে অনতিবিলম্বে সেটির সুরাহা করার চেষ্টা করে থাকি।
সরেজমিন প্রত্যক্ষ করে জানা যায়, লোকবলের অভাবে হলগুলোতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা নেওয়া যাচ্ছেনা। গ্যাস সংযোগ না দিলে ডাইনিং চালুর কথা কল্পনাও করা যায়না। কোন হলেই এখনো পর্যাপ্ত সংখ্যক সুপেয় পানির জন্য ফিল্টারের ব্যবস্থা করা হয়নি। লোকবলের অভাবে ওয়াশরুম নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়না। এছাড়াও, তারামন বিবি হলের দোকানগুলোতে খাবার ও পণ্যের দাম তুলনামূলক বেশি।
মন্তব্য