মোঃ শাকিল মোল্লা, রাজবাড়ী জেলা প্রতিনিধি:
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে কোন অভিযোগ ছাড়াই এক ব্যবসায়ীর ১০ টি বড় আকৃতির গরু থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ।
গরুগুলো ছাড়িয়ে নিতে ব্যবসায়ীর পরিবারের লোকজন ছাড়াও যে সকল বিক্রেতা গরুগুলো বিক্রি করেছেন তারা দিনভর পুলিশের পিছে ধর্না দিচ্ছেন। কিন্তু ওসির দাবি, তাদের কাছে গোপন তথ্য আছে এগুলো চোরাই গরু।যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত মালিকের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত গরু ব্যবসায়ী গাজী হাওলাদারকে (৬৫) আটক করা হয়েছে। তিনি উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের চর দৌলতদিয়া হাচেন মোল্লার পাড়ার মৃত ইসমাইল হাওলাদারের ছেলে।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) গভীর রাত ২ টার দিকে গাজী হাওলাদারের বাড়িতে গিয়ে পুলিশ তাকে আটক করে এবং দুপুরে গরুগুলো থানায় নিয়ে যায়।
ব্যবসায়ী গাজী হাওলাদারের বড় ছেলে চুন্নু হাওলাদার বলেন, গরুর ব্যবসা তাদের বহু বছরের পুরোনো ব্যবসা। তারা সাধারণত বিভিন্ন হাটবাজার ও গৃহস্থ বাড়ী হতে গরু কিনে বিভিন্ন অনুষ্ঠান বাড়ি ও হোটেলে মাংস সরবরাহ করে থাকেন।পাশাপাশি কিছু গরু লালন-পালনও করে থাকেন। যে কারনে তাদের খামারে সবসময়ই ১০/১২ টি গরু বিদ্যমান থাকে। পুলিশ ভুল তথ্যের ভিত্তিতে মধ্য রাতে তাদের বাড়ির পাকা দেয়াল টপকে ভেকরে প্রবেশ করে তার বাবাকে আটক করে এবং দিনের বেলায় তাদের ১০ টি গরু থানায় নিয়ে যায় । আমরা যে সকল গৃহস্থ্যের কাছ থেকে গরুগুলো কিনেছি তারা খবর পাওয়ার পর আমাদের বাড়ি ছুটে আসে। তারা পুলিশকে তথ্য-প্রমান ও সাক্ষ্য দেয়ার পরও কারো কোন কথাই তারা শোনেননি।
ইসমাইল হোসেন (৬০) নামে স্হানীয় এক ব্যাক্তি জানান, তিনি গাজী হাওলাদারের কাছে ৫ লক্ষ ১৫ হাজার টাকায় ৩ টি গরু বিক্রি করেছেন। নগদ মাত্র ১৫ হাজার টাকা পেয়েছেন। ৫ লক্ষ টাকাই বাকি রয়েছে। শুক্রবার কয়েকটি অনুষ্ঠানে মাংস সরবরাহ করে তার বাকি টাকাগুলো আমাকে দেয়ার কথা ছিল। এখন পুলিশ অযথা এসে বলছে এগুলো চোরাই গরু।
উজানচর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মজনু শেখ জানান, তিনি গাজী হাওলাদারের কাছে ১ লক্ষ ৯৮ হাজার টাকায় ২ টি গরু বিক্রি করেছেন। নগদ ৯৮ হাজার টাকা পেয়েছেন। এখনো ১ লক্ষ টাকা বাকি। এমতাবস্থায় সকালে খবর পেলাম গাজীর বাড়ি হতে নাকি পুলিশ চোরাই গরু বলে গরুগুলো থানায় নিয়ে যাচ্ছে। তাইতো ছুটে এলাম।
একইভাবে অন্যান্য বিক্রেতারাও বলেন, তারা তাদের নিজেদের গরু বৈধভাবে বেচাকেনা করেছেন। এগুলো চোরাই গরু নয়। আমরা অযথাই হয়রানির শিকার হচ্ছি।
গোয়ালন্দ পশু হাসপাতালের চিকিৎসক ইকবাল হাসান বলেন, তিনি গাজী হাওলাদারের গরুগুলো নিয়মিত দেখভাল করে চিকিৎসা সেবা দেন। এগুলো চোরাই গরু নয়। এ বিষয়ে আমিসহ এলাকার লোকজন পুলিশের উপস্হিত অফিসারকে জিজ্ঞেস করে কোন সদুত্তোর পাইনি।
স্হানীয় সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল গাফফার বলেন, গরুগুলো চোরাই নয়। তিনি অনেকদিন ধরে মাংসের ব্যবসা করেন। পাশাপাশি গরু লালন-পালন করে থাকেন।
সরেজমিন আলাপকালে গোয়ালন্দ ঘাট থানায় ওসি (তদন্ত) উত্তম কুমার জানান, গরুগুলোর বিষয়ে কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ বা জব্দের নির্দেশনা নেই। তবে গোপন তথ্য রয়েছে এগুলো চোরাই গরু। এ জন্য থানায় নিয়ে যাচ্ছি।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি রাকিবুল ইসলাম জানান, তাদের কাছে গোপন তথ্য আছে এগুলো চোরাই গরু। তাছাড়া গাজী হাওলাদার একটা গরু চোর। তার বিরুদ্ধে পূর্বের মামলা রয়েছে। তার বাড়ি হতে নিয়ে আসা ১০ টি গরুর বিষয়ে অধিকতর খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত মালিকের কাছে গরুগুলো হস্তান্তর করা হবে।
মন্তব্য