রাবি প্রতিনিধি:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক ও স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে প্রথম বর্ষ ভর্তিতে পোষ্য কোটার হার পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। বুধবার (১ জানুয়ারি) এক সংবাদ বিজ্ঞাপ্তি বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় জনসংযোগ দপ্তর। এখন থেকে শুধু সহায়ক ও সাধারণ কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ১ শতাংশ কোটা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে রাবি উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেছেন, কোটা ইস্যু নিয়ে আর কোন ধরনের যন্ত্রণা চাই না। নতুন যন্ত্রণা সৃষ্টির আর কোন যৌক্তিক কারন নেই। এই ধরনের চেষ্টাকে অপচেষ্টা বলে বিবেচনা করা হবে।
বুধবার (১ জানুয়ারি) রাত ৭টার দিকে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে এই মন্তব্য করেন তিনি।
ওই পোস্টে তিনি লিখেছেন, আজ প্রায় দু’মাস ধরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরিক্ষায় কোটা নিয়ে অস্থিরতা চলছে। অনেক চড়াই উতরাই পেরিয়ে আজ একটা সিদ্ধান্ত এসেছে। এতদিন বহু কথা বলার থাকলেও কিছু বলি নি। একটা দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে সব কথা বলা যায় না। কোটা ইস্যু নিয়ে আর কোন ধরনের যন্ত্রণা চাই না। নতুন যন্ত্রণা সৃষ্টির আর কোন যৌক্তিক কারন নেই। এই ধরনের চেষ্টাকে অপচেষ্টা বলে বিবেচনা করা হবে।
শিক্ষক এবং কর্মকর্তাদের সন্তানদের কোটার বিষয়ে তিনি লিখেন, শিক্ষক এবং কর্মকর্তাদের জন্য কোটা তুলে দেওয়া হয়েছে। কারন এই কোটা রাখার পেছনে কোনো শক্তিশালি যুক্তি বা, নৈতিক ভিত্তি নেই। কেউ যেন ঘুনাক্ষরেও মনে না করে শুধুমাত্র দাবির মুখে এটা করেছি। ছাত্রছাত্রীদের কোন অন্যায় আবদার মানার কোন দায় আমার নেই। এটা সামনে আরো পরিষ্কার হবে।
তিনি লিখেছেন, আজ (বুধবার) সকালে ভর্তি উপকমিটির মিটিং ছিল। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, শিক্ষক এবং কর্মকর্তা যারা কোন বিচারেই অনগ্রসর শ্রেণিতে পড়েন না, তাদের জন্য আর কোটা সুবিধা থাকছে না। একেবারে লোয়ার লেভেলে যারা সার্ভিস দিচ্ছেন তাদের জন্য ১% কোটা এখন থাকছে। এর কারনটা বলি। আজ প্রায় ৩৪ বছর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সম্পর্ক। শুরু থেকেই দেখেছি, সুইপারের সন্তান সুইপার হচ্ছে, মালির ছেলে মালি। যদিও আমি প্রতিটি পেশাকে মর্যাদাপূর্ণ বলে মনে করি, কিন্তু সমাজ আমার দৃষ্টিভঙ্গিতে চলে না। আমি মনে করি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত এই শ্রেণিটির এই বৃত্ত ভাঙ্গার একটা সুযোগ এবারো থাকা উচিত।
তিনি আরও লিখেছেন, এই প্রস্তাবনা নিয়ে আজ দুপুর সাড়ে বারোটায় ভর্তি কমিটির মিটিং ছিল। সেখানে আমার সম্মানিত সহকর্মিরা তাদের মতামত দিয়েছেন। তর্কবিতর্ক হয়েছে। পক্ষে-বিপক্ষে অনেক কথা হয়েছে শেষ পর্যন্ত ভর্তি উপকমিটির সিদ্ধান্ত বলবত থেকেছে। আমি খুব পরিষ্কার জানি, আমাদের সিদ্ধান্ত শিক্ষক- কর্মকর্তাদের একটা বড় অংশের পছন্দ হবে না। এটা স্বাভাবিক, দীর্ঘদিনের একটা সুবিধা উঠে গেলে ভালো লাগার কথা নয়। তবে তাদের শুভবুদ্ধির কাছে আবেদন, আপনারা ভাবলে বুঝতে পারবেন, দীর্ঘদিনের অপমান এবং অসম্মান থেকে আপনারা এবং আপনাদের সন্তানদের মুক্ত হওয়ার একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
অনেক চেষ্টার পরেও কোনো ঐক্যমতে পৌঁছানো যায় নি বলে উপাচার্য তার পোস্টে দাবি করেছেন।
তিনি লিখেছেন, কোটার ব্যাপারে আমার ব্যক্তিগত অবস্থান সবসময় পরিষ্কার। এই সব দাবি দাওয়া বা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যখন কোন নাম নিশানা ছিল না তখন থেকেই। তবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে কখনই আমি ব্যক্তিগত মনোভাবকে সামনে রাখি নি। আমার বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার অনেক বড়। এদের সবার মতামতের মুল্য আছে। তবে সেই মতামত যৌক্তিক এবং ন্যায়সঙ্গত হতে হবে। এই দৃষ্টিভঙ্গিকে সামনে রেখে দুজন প্রোভিসির নেতৃত্বে একটা কমিটি গঠন করা হয় - উদ্দেশ্য বিভিন্ন পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া। এই কমিটি ফর্মালি, ইনফর্মালি বহু চেষ্টা করেছে। তাদের চেষ্টার কোন ত্রুটি ছিল না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোন ঐক্যমতে পৌঁছানো যায় নি।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিষয়ে তিনি লিখেছেন, সামনের দিকে তাকাতে চাই। এই মুহূর্তে আমাদের ফোকাস চারটি, ছাত্রছাত্রীদের জীবনমানের উন্নয়ন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সামনের ভর্তি পরিক্ষা সুষ্ঠুভাবে নেওয়া এবং রাকসু নির্বাচন। এই সমস্ত কাজে মনোযোগ দিতে চাই।
উপাচার্যের পোস্টটি নিজ টাইমলাইনে শেয়ার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন মন্তব্য করেছেন, ৪ শতাংশ থেকে নামিয়ে কার্যত শূন্যতে নেয়া হয়েছে। এই কমিউনিটির একটি বৃহত্তর অংশ শিক্ষক কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে কোটা থাকছেনা। তবে মানবিক কারণে শুধুমাত্র একটি অংশ তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারীদের জন্য ১ শতাংশ রাখা হয়েছে। এতদিন যারা কোটার যৌক্তিক সংস্কার চেয়ে আসছেন তাদের কাছে এই সংস্কার যদি যৌক্তিক মনে না হয় তাহলে আপনাদের কাছে জানতে চাই ‘সংস্কার ‘ আর ‘ বাতিল ‘ শব্দ দুটির মধ্যে পার্থক্য কোথায়। এর পরেও যে সকল শিক্ষার্থী প্রশাসন ভবনে তালা লাগাতে চান আমি আহ্বান করছি তালা না লাগিয়ে আপনাদের মধ্য থেকে কেউ আসুন অন্তত আমার পদের দায়িত্ব নিন এবং কোটা বাতিল করুন।
তিনি আরো লিখেন, ইংরেজিতে একটি কথা আছে ‘Enough is enough” সীমা অতিক্রম করা কারও জন্য মঙ্গল হবেনা। মনে রাখা প্রয়োজন শিক্ষার্থীরা এই প্রতিষ্ঠানের অন্যতম স্টেকহোল্ডার তবে অবশ্যই একমাত্র নয়! এই বিশ্ববিদ্যালয় ভালোভাবে চালাতে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। সেটি না হলে আমরা সকলেই ক্ষতিগ্রস্ত হবো। আশা করি আমাদের সকলের সেই বোধোদয় হবে।
এদিকে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে অনড় রয়েছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, রাবির সমন্বয়করা। রাবির অন্যতম সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, এখনো প্রশাসনের কাছে ভাবার মত সময় রয়েছে। ১ শতাংশ কেনো, ০.১ শতাংশ পোষ্য কোটাও রাখা যাবেনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের চেয়েও কয়েকগুন দরিদ্র মানুষ এই দেশে রয়েছে। কর্মচারীরা দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী না।
মন্তব্য