বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারী ২০২৫
 

বাংলাদেশের নাগরিকদের সীমান্তে হত্যার ইস্যুতে ন্যায়ের পক্ষে ভারতীয় জনগন

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ৮ জানুয়ারী ২০২৫

---

জাবি প্রতিনিধি

সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আদালতে গেলে ভারতীয় জনগণের পক্ষ থেকে সহায়তার আশ্বাস; বাংলাদেশের মানুষের ন্যায্য আন্দোলনে সঙ্গে থাকার জন্য ভারতীয় জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার

 

বাংলাদেশ ল অ্যালায়েন্সের আয়োজনে ৭ জানুয়ারী ২০২৫ ইং তারিখে “সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের দায় এবং বিচার” শীর্ষক আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন, মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চের সম্পাদক কিরীটি রায়, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য মোল্লা মোহাম্মদ ফারুক এহসান এবং সোশ্যাল একটিভিস্ট সাইয়েদ আবদুল্লাহ। শুরুতেই সঞ্চালক মো: ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ ফেলানী হত্যার ঘটনা এবং সীমান্তে হত্যা ও নির্যাতনের বিবরণ তুলে ধরেন। বক্তাদের সবাই হত্যার বিচারের দাবিতে জনমত গঠন ও ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।

 

ফেলানী হত্যাকাণ্ড নিয়ে মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চের দীর্ঘ সংগ্রামের কথা তুলে ধরেন মাসুম সম্পাদক কিরীটি রায়। তিনি তদানীন্তন সময়ে বাংলাদেশ সরকার থেকে সেরকম কোনো সহযোগিতা না পাবার জন্য আক্ষেপ জানান। বিএসএফের হাতে বাংলাদেশীর চেয়ে অনেক বেশী ভারতীয় নিহত হন বলে জানান কিরীটি রায়। ইন্ডিয়ান বিএসএফের অসততার কথা স্বীকার করেন তিনি। পাশাপাশি বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষীর অসততার কথাও বলেন কিরীটি রায়। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে কাঁটাতারের কথা উল্লেখ করেন কিরীটি রায়। সীমান্ত হত্যা বন্ধে মানুষকে সোচ্চার হবার আহবান জানান তিনি। এই মানবাধিকারকর্মী সবাইকে সক্রিয় হবার কথা বলেন। সীমান্ত হত্যার ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার আইসিসির স্বাক্ষরভুক্ত পক্ষ হিসেবে আন্তর্জাতিক আদালতে গেলে ভারতীয় জনগণ এবং অধিকার সংস্থাগুলো সর্বাত্মক সহায়তা দিবে বলে জানান কিরীটি রায়। সীমান্ত হাট চালু করার কথা বলেন কিরীটি রায়। এতে সীমান্তবর্তী পিছিয়ে থাকা গ্রামীণ উন্নয়ন ও জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হবে বলে মনে করেন তিনি। তিনি আবু সাঈদরত্যাগ ও সাহসিকতাকে স্মরণ করেন এবং এরকম মনোভাব লালন করার কথা বলেন। সমাপনী বক্তব্যে তিনি আরও যোগ করেন, “রাস্তাই একমাত্র রাস্তা। রাস্তাতেই নামতে হবে।”

 

আলোচনায় অংশ নিয়ে অধিকারকর্মী সাইয়েদ আবদুল্লাহ ভারতের আগ্রাসী মনোভাবের ব্যাপারে ক্ষোভ ও নিন্দা জানান। বাংলাদেশের তরুণ সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি জানান বাংলাদেশের জনগণ ভারতীয় জনগণের বিপক্ষে নয়; বরং সাম্রাজ্যবাদী মোদী প্রশাসনের আগ্রাসনের বিপক্ষে সুস্পষ্টভাবে অবস্থান নিয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের ন্যায্য আন্দোলনে ভারতে পশ্চিমবঙ্গসহ বিভিন্ন জায়গার মানুষের সহযোগিতা, এমনকি রাস্তায় নেমে আসাকে স্বাগত জানান সাইয়েদ আবদুল্লাহ। বাংলাদেশের বিগত সরকারের নতজানু পররাষ্ট্র নীতি ও অক্ষমতার ব্যাপারে কথা বলেন তিনি। সাইয়েদ আবদুল্লাহ হাসিনার আমলে ভারতের কাছে নতি স্বীকার এবং স্বাধীনতা বিলিয়ে দেবার কথা স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করেন। বাংলাদেশের মানুষকে সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে সচেতনতা বাড়ানোর তাগিদ দেন সাইয়েদ আবদুল্লাহ। সীমান্ত হত্যাকাণ্ড শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে এবং অপরাধ কমাতে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ আশা করেন তিনি। সাইয়েদ আবদুল্লাহ সমাপনী বক্তব্যে বলেন, “শুধু প্রভুত্ব ফলানোর জায়গাটা দূর হউক, মানুষে মানুষে বন্ধুত্ব হউক।”

 

সীমান্তে ভারতীয় বাহিনী কেন্দ্রীয় সরকারের সবুজ সংকেত থাকার জন্যই বেপরোয়া হয়ে ওঠে এবং মানুষকে হত্যা করে বলে মন্তব্য করেন নিরাপদ সড়ক চাই এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সীমান্ত হত্যার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার আহবান জানিয়েছেন নিরাপদ সড়ক চাই এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন। ইলিয়াস কাঞ্চন কিরীটি রায়কে বাস্তবিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ জানান।

 

জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য মোল্লা মোহাম্মদ ফারুক এহসান ভারতের আগ্রাসী মনোভাবের কথা উল্লেখ করেন। চোরাচালানের ক্ষেত্রে ভারতের মদদ থাকার বিষয়ে ইঙ্গিত দেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ এবং বাংলাদেশের মানুষের কৃষ্টি কালচারে মিল থাকার কথা উল্লেখ করেন ফারুক এহসান। ফেলানী খাতুন থেকে স্বর্ণা দাশের হত্যাকাণ্ডের জন্য ভারতের দায়বদ্ধতার কথা বলেন এবং প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার দাবি করেন তিনি। তিনি ভারতের নিপীড়িত মানুষের প্রতি সংহতি জানান। সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভারতীয় নাগরিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ফারুক এহসান। ভারতীয় জনগণ শীঘ্রই ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত হবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন মোল্লা ফারুক এহসান। তিনি বলেন শান্তিপূর্ণ উপমহাদেশ গড়ে উঠবে, মানুষ বাঁচবে মানবিক মর্যাদা নিয়ে।

মন্তব্য

সর্বশেষপঠিত

এলাকার খবর

Developed By: Dotsilicon