নিজস্ব প্রতিবেদক
ভাটারায় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এক কিশোরকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে অপহরনের ঘটনা ঘটেছে। গত ৫ জানুয়ারী রাত ৮ টায় রাজধানীর ভাটারার খিলবাড়িরটেক এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে। এর ৩ মাস আগেও একই ঘটনা ঘটিয়েছিল মাসুদ রানা বলে অভিযোগ করেন কিশোরের পরিবার। কিশোর রিফাত পুর্ব ভাটারার খিলবাড়িরটেক এলাকার জাহাঙ্গীর হাওলাদারের পুত্র রিফাত (১৩)। এ ব্যাপারে গত ৯ জানুয়ারী কিশোরের পিতা জাহাঙ্গীর হাওলাদার বাদি হয়ে মাসুদ রানা (৩৫) কে ১ নং আসামী করে ঢাকার বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ট্রাইব্যুনালের ৯ নং আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মাসুদ রানা মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার মহিষমারী এলাকার মানিক হাওলাদারের ছেলে।
আদালত ও সরেজমিন সূত্রে জানা যায়, বাদী জাহাঙ্গীর ও বিবাদী মাসুদ রানা উভয়ই খিলবাড়িরটেক এলাকায় বসবাস করেন এবং বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত দেলোয়ার মেম্বারের চাচাত ভাই আ.লীগ নেতা শহিদুলের মেয়ে জামাই ও স্থানীয় আ.লীগ নেতা ও সাবেক কমিশনার শফিকুল ইসলাম বাসেকের ডান হাত বলে পরিচিত। বাদী ও বিবাদী একই এলাকায় দীর্ঘ দিন যাবত ব্যবসার পরিচালনার সুবাদে সু-সম্পর্ক তৈরি হয়। বাদী জাহাঙ্গীরের পরিবারিক ও ব্যবসায়ীক কারনে নগদ টাকার প্রয়োজন হলে আসামী মাসুদ রানাকে টাকা ধার নেয়ার জন্য প্রস্তাব করিলে তিনি টাকা দিতে সম্মত হন। কিন্তু শর্ত হল সুদ দিতে হবে। জাহাঙ্গীর সেই শর্তে রাজি হয়ে ১০০ টাকার ৭টি স্ট্যাম্প ও ব্ল্যাংক চেকে স্বাক্ষর করে ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল ২,৫০,০০০/- (২ লক্ষ ৫০ হাজার) টাকা গ্রহণ করে। এরপর বিভিন্ন তারিখে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা লাভসহ ফেরত দিয়ে আসামীর কাছে থাকা স্ট্যাম্প ও চেক ফেরত চাইলে মাসুদ রানা টাকা ফেরত দাওনি কাজেই স্ট্যাম্প ও চেক ফেরত দেয়া সম্ভব নয়।
আসামীর নিকট জানামাল ও সম্মান রক্ষার্থে ২০২৪ইং ১৩ জুন ভাটারা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে জাহাঙ্গীরে হাওলাদার। যার নং-১৬০৮।
জাহাঙ্গীর হাওলাদার লাভসহ ২ লাক্ষ ৫০ হাজার টাকা ফেরত দেয়া স্বত্বেও আসামী মাসুদ রানা তাকে বাসা থেকে তুলে এনে প্রাণে শেষ করে দেয়ার হুমকি প্রদান করে। যেই কথা সেই কাজ, তারই ধারাবাহিকতায় মাসুদ রানা গত ৫ জানুয়ারী ২০২৫ইং রাত ৮টার সময় ১২-১৩ জন অজ্ঞাত লোক খিলবাড়িরটেক জাহাঙ্গীরের বাসায় তাকে তুলে আনতে পাঠালে তাকে না পেয়ে তার ছেলে রিফাত (১৩) কে তুলে নিয়ে যায়। পরে খোজঁ খবর নিয়ে জানা যায়, রিফাতকে তুলে নিয়ে মাসুদ রানার বাড়িতে আটকে রেখে প্রচন্ড নির্যাতন করেছে এবং ১৫ লক্ষ টাকা না দিলে রিফাতকে মেরে ফেলার হুমকিও দিচ্ছে।
এমতাবস্থায় জাহাঙ্গীর কোন উপায়ান্ত না পেয়ে ছেলে রিফাতকে মুক্ত করতে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। শেষমেস স্থানীয় প্রভাবশালী ও বিত্তশালি নেতা দেলোয়ার মেম্বারের দ্বারস্থ হয়ে ছেলেকে ছেড়ে দেয়ার সুপারিশ করতে বললে তিনি জানান, সামনে নির্বাচন এই ঝামেলার মধ্যে যেতে চাইনা। আপনারা বিকল্প ব্যবস্থা নেন। তবে গোপন এক সূত্রে দাবি করছে, অপহরণের পেছনে দেলোয়ার মেম্বারের ইন্ধন রয়েছে। এরপর কোন উপায়ান্ত না পেয়ে ভাটারা থানায় মামলা করতে গেলে থানা কর্তৃপক্ষ মামলা না নিয়ে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেন। এরপর জাহাঙ্গীর ৯ জানুয়ারী বৃহস্পতিবার আদালতে মামলা করিলে ঐ দিনই আসামী মাসুদ রানার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন বিজ্ঞ আদালত। তারই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার রাত ১০.৩০ মিনিটের সময় মাসুদ রানার খিলবাড়িরটেক এলাকার বাসা থেকে ভাটারা থানা পুলিশ গ্রেফতার করে এবং ভুক্তভোগী রিফাতকে থানায় নিয়ে যায়।
গ্রেফতার পরবর্তী দেলোয়ার মেম্বারের যত কান্ড
মাসুদ রানাকে গ্রেফতার করে থানায় নেয়ার পর স্থানীয় বিএনপির প্রভাবশালী নেতা দেলোয়ার মেম্বার প্রায় দেরশত লোকবল নিয়ে থানা ঘেরাও করে মাসুদ রানাকে ছেড়ে দেয়ার দাবি জানান। এক পর্যায়ে পুলিশকে টাকার বান্ডিল দিলেও থানা কর্তৃপক্ষ গ্রেফতারকৃত আসামীকে কোনভাবেই ছাড়তে পারবেনা বলে সাফ জানিয়ে দেন। অপরদিকে বাদিকে সমঝোতার জন্য চাপ সৃষ্টি করারও অভিযোগ রয়েছে। অপরদিকে আদালতের বরার দিয়ে আরো জানা গেছে, এজলাসে বসে আসামী মাসুদ রানা বাদীকে জাহাঙ্গীরকে বলে এলাকায় যেতে হবে না? তখণ দেখব তোমাকে কে বাচায়। বিষয়টি তৎক্ষনাত বাদির আইনজিবি বিচারপতিকে অবহিত করেন।
এ ব্যাপারে বাদী জাহঙ্গীরের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, বিনা অপরাধে আমাল ছোট ছেলেকে অপহরণ করে ৪ দিন আটকে রেখে মারধর ও মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে আমি এর সঠিক বিচার চাই। ভবিষ্যতে যেন কেহ কোন বাবা-মায়ের সন্তানকে এভাবে তুলে নিয়ে নির্যাতনের সুযোগ না পায়।
ভুক্তভোগী ছেলে রিফাত জানিয়েছে, ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে গেছিল, কখন বুঝি আমাকে মেরে ফেলে। না খেয়ে নির্ঘুম ৩ রাত কাটিয়েছি। আমি তার সঠিক বিচার চাই।
এ ব্যাপাদের দেলোয়ার মেম্বারের কাছে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
মন্তব্য