শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫
 

গণমাধ্যম আন্দোলনকারীদের জাতির শত্রু হিসেবে তুলে ধরেছিল- প্রেস সচিব

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ জানুয়ারী ২০২৫

---

আশিকুর রহমান, জবি প্রতিনিধি, 

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, অনেক গণমাধ্যম আন্দোলনকারীদের ‘জাতির শত্রু’ হিসেবে তুলে ধরেছিল। গণমাধ্যমের ভাষা ব্যবহার করে তখন শাসকদের কাছে বার্তা দেয়া হচ্ছিল এই আন্দোলনকারীদের দমন করা উচিত। আন্দোলনে ২ হাজার মানুষ মারা গেছে। যদি ফ্যাসিস্টরা জয়ী হতো, তাহলে দুই লক্ষ লোক জেলে যেতে। তাদের রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নেয়া হতো।

শনিবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি কর্তৃক  আয়োজিত ‘জুলাই বিপ্লবে গণমাধ্যমের ভূমিকা ও পরবর্তী প্রত্যাশা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ক্ষমতাবানকে প্রশ্ন করা সাংবাদিকদের কাজ উল্লেখ করে শফিকুল আলম বলেন, সাংবাদিকদের এই কাজ চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিতে হবে। ছাত্রদল বা শিবির যার বিরুদ্ধেই রিপোর্ট হয়, তাহলে প্রথমে দেখতে হবে রিপোর্ট টা সত্য কিনা। সত্যি হলে তা মেনে নিতে হবে।

জুলাই আন্দোলনে সাংবাদিকদের ভূমিকার কথা স্মরণ করে শফিকুল আলম বলেন, জুলাই আন্দোলনে সাংবাদিকরা সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে যে ভূমিকা পালন করেছে, তা ঐতিহাসিক। এই আন্দোলনে দেশের টিভি, অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়াসহ  ও অনেক সিটিজেন সাংবাদিক ভূমিকা রেখেছে।

শফিকুল আলম আরও বলেন, জুলাই আমাদের মহত্তম সময়। এই সময় আদের জন্য পূর্বে আর কোনবার আসেনি। আমাদের সাংবাদিকরা ১৯৭১ এর যুদ্ধ কতটুকু দেখেছে আমি জানি না। তখন আমাদের এক কোটি লোক শরনার্থী হয়ে আশ্রয় নিয়েছিল। এদের মানবেতর জীবন ও দুঃখ দুর্দশা নিয়ে খুব কমই লেখা পাওয়া যায়। এসব নিয়ে আমরা স্টোরি করিনি।

শফিকুল আলম আরও বলেন, আমাদের লেখালেখির অভ্যাসটা খুব কম। লেখার অভ্যাস বাড়াতে হবে।  কার কতটুকু ভূমিকা লিখে রাখেন। প্রতি মুহূর্তে এই লেখা আমাদের নতুনভাবে আলোকিত করবে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকরা ঠিকই তাদের লেখা চালিয়ে গেছে। পত্রিকায় লিখেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছে। আবু সাঈদের শহীদ হওয়ার ভিডিওটা প্রকাশ হয়েছিল, ওটাও ছিল সিটিজেন জার্নলিজম। যারা আন্দোলনকে গণ জোয়ারে পরিণত করতে ভূমিকা রেখেছিল তাদের ব্যাপারে জানতে হবে। ঠিক একইভাবে যারা আমাদের ওপর আত্রমণ চালিয়েছিল, স্বৈরাচারী সরকারকে ইন্ধন জুগিয়েছিল তাদের ব্যাপারেও জানতে হবে। আমাদের আবু সাঈদের শহীদের গল্পটা জানতে হবে।

দেশের মধ্যে শেখ হাসিনা চোরতন্ত্র তৈরি করেছিলেন মন্তব্য করে প্রেস সচিব বলেন, ‘বড় বড় কোম্পানিকে কাজ পাইয়ে দেয়া ছিল তার কাজ। সে সময় বিদেশে টাকা পাচারকারীরা এখন সেই টাকায় প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। তারা প্রতিষ্ঠিত করতে চায় যে, এখানে এখন মৌলবাদী শক্তির উত্থান ঘটেছে, কোনো গণ-অভ্যুত্থান হয়নি। পরাজিত শক্তি আবার আপনাদের জঙ্গি বানাতে চায়। জুলাই-আগস্টে কার কী ভূমিকা ছিল, তা নিয়ে আরও ভালো করে জানার কাজ চলছে।

শফিকুল আলম আরও বলেন, ২০০৯ সালের ক্ষমতায় আসার পর প্রথম যে ন্যারেটিভ তৈরি করেছিল তা হলো ‘স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি’। এই পুরো সময়ে আওয়ামী বয়ানই বিদ্যমান ছিলো। আন্দোলন করেছে ছাত্রদল, শিবির, বামপন্থীরা। কিন্তু এমনভাবে উপস্থাপন করেছে যে বৈশ্বিকভাবে সন্ত্রাসী ও তালেবান হিসেবে। যার মানে তাকে মারা জায়েজ।

প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআইবি) এর মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ বিশেষ আলোচকের বক্তব্যে  বলেন, ফ্যাসিবাদী শক্তি শুধু মূর্তি বানাইনি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাতিক কানেকটিভিটি (সম্পর্ক) এখনো বিদ্যমান রযেছে। অনুরূপভাবে আমরা কিছু ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে পারি, যেগুলো একসময় বড় প্রতিষ্ঠানে রূপ নিবে।

প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা যায় না উল্লেখ করে ফারুক ওয়াসিফ বলেন, প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করতে গেলে আমরা নিজেরা বিলুপ্ত হয়ে যাবো। ফ্যাসিবাদ কোন প্রতিষ্ঠান নয়, ফ্যাসিবাদ হলো জমিদারি ও কর্তৃত্ব, আমরা সেই জমিদারি ও কর্তৃত্বের অবসান করতে চাই।

ফারুক ওয়াসিফ বলেন, আমাদের ভিশনটা (লক্ষ্য) হবে জাতীয় ও জনগোষ্ঠীর স্বার্থ কেন্দ্রিক। যদি ভিশনটা ব্যক্তি কেন্দ্রিক হয়, তাহলে এটি হয়ে যায় এমভিশন(উচ্চাকাঙ্খা)। যার ফলস্বরূপ এই অভ্যুত্থান পরবর্তী ছয় মাস আমরা মতবাদ প্রতিষ্ঠায় জোর দিচ্ছি, এই কারণে আমরা বিভক্ত হয়ে যাচ্ছি।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ইমরান হুসাইন এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, স্বৈরাচারের ইতিহাস আমরা যা দেখেছি, তা বর্ণনা করতে গেলে কয়েক ঘন্টা লেগে যাবে। স্বৈরাচার যখন কোন একটা ছেলেকে পিঠিয়ে মেরে ফেলত, তখন বলা হত, ছাত্রদল অথবা শিবির মরেছে। তাহলে তার পাশে কাউকে দেখা যেত না।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন লিমন বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর যাবৎ দেশে সাংবাদিকতার নামে যে অপ-সাংবাদিকতা হয়েছে সেটাকে রুখতে ক্যম্পাস সাংবাদিকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ ও তাদের জন্য আলাদা একটা ওয়েজ বোর্ড গঠন করে বেতন কাঠামো নির্ধারন করতে হবে।

জবি সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন লিমনের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্বিবদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমিন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রইছ উদ্দিন। আরও বক্তব্য রাখেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. আসাদুল ইসলাম, জাস্টিস ফর জুলাই, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক সজিবুর রহমান, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও জবি শিক্ষার্থী নূর নবী।

এছাড়াও অনুষ্ঠানের শুরুতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জবি সাংবাদিক সমিতির সহ সভাপতি আসাদুল ইসলাম। এসময় বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মী,  বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ, বি়ভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য

সর্বশেষপঠিত

এলাকার খবর

Developed By: Dotsilicon