মিজানুর রহমান, চট্টগ্রাম:
২০০৭ সালে গোপন এবং জ্ঞাত আয়বর্হিভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দায়েরকৃত দুদকের মামলায় আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদিকে চট্টগ্রাম আদালতের বদলে রাখা হয়েছে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে।
এদিকে, আজ রোববার (১২ জানুয়ারি) সেই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য্য থাকলেও শুধুমাত্র পুলিশ প্রটেকশনের অভাবে গাজীপুর থেকে চট্টগ্রামে আনা যায়নি। ফলে, সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ পেছানোর পাশাপাশি সাক্ষ্য দিতে আসা ঢাকা ব্যাংক কক্সবাজার শাখার সাবেক ম্যানেজার সৈয়দ মফিজ উদ্দিন আহাম্মদ ফিরে গেছেন। আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী দিন ধার্য্য করেছেন আদালত।
দুদকের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু গণমাধ্যমকে বলেন, ব্যাংকে থাকা আবদুর রহমান বদির অবৈধভাবে অর্জিত টাকার বিষয়ে তিন ব্যাংক কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য্য ছিল আজ। তবে আসামি বদিকে চট্টগ্রাম আদালতে হাজির না করায় সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি। আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী তারিখ ধার্য করা হয়েছে।
এদিকে বদির আইনজীবীর অভিযোগ, ঢাকায় কোনো মামলা নেই, তবু বদিকে হয়রানি করতে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে। যদিও কারা কর্তৃপক্ষ আদালতকে জানিয়েছেন, তাঁকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করতে আবেদন করেও গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ থেকে প্রটেকশন দল পাওয়া যায়নি।
আবদুর রহমান বদিকে চট্টগ্রাম পাঠাতে না পারা প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালত বরাবর একটি চিঠি পাঠিয়েছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ-আল-মামুন। চিঠিতে বলা হয়, বদিকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করতে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে চাহিদা পাঠিয়ে পুলিশ প্রটেকশনের দল পাওয়া যায়নি। পরবর্তী ধার্য দিন কারা কর্তৃপক্ষকে জানাতে আদালতকে অনুরোধ করা হয়।
দুদক সূত্র জানায়, ৪৩ লাখ ৪৩ হাজার ৯৯৪ টাকার তথ্য গোপন এবং ৬৬ লাখ ৭০ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালে আবদুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলাটি করে দুদক। পরের বছর তদন্ত শেষে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। মামলার সময় আবদুর রহমান বদি টেকনাফ পৌরসভার নির্বাচিত মেয়র ছিলেন। পরে তিনি উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে এলে মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত থাকে। এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করলে দীর্ঘদিন পর ২০১৭ সালে মামলাটি সচল হয়।
২০২০ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর আবদুর রহমান বদির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এই মামলার বিচার শুরু হয়। বিচারের আদেশের বিরুদ্ধে বদি পরে হাইকোর্টে যান। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে হাইকোর্ট সেই আবেদন খারিজ করে দেন। পরে একই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। সবশেষ গত ২৮ অক্টোবর এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন ইসলামী ব্যাংকের টেকনাফ শাখার সাবেক দুই কর্মকর্তা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় মাদক চোরাচালানের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আবদুর রহমান বদির নাম রয়েছে। তালিকায় ‘মাদকের গডফাদার’ হিসেবে তার চার ভাইসহ রয়েছে পরিবারের অন্তত ২৬ জনের নাম। গত ২৪ আগস্ট রাতে চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ এলাকা থেকে আবদুর রহমান বদিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৭। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর টেকনাফ থানায় করা একটি হত্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে পরে কারাগারে পাঠানো হয়।
মন্তব্য