শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
 

বহুরুপীর ভিড়ে আসল মানুষ চেনা বড় দায়

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

---

মাহফুজ রাজা,ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি:

কি করে যে সজনী,মানুষগুলোকে চিনি।

সে বড্ড গোলমেলে,চিনতে গেলে চোখ মেলে,

সে যে বড় চতুর,বোঝা যায় যতদূর।

আড়ালে আবডালে,পৃথক কথা বলে।

সামনে থাকে সে যে,মহাযোগী সেজে।

অরুণ কারফার “মানুষ চেনা”কবিতার উপরিউক্ত পঙক্তিগুলি সত্যিকার অর্থে ভাববার বিষয়।

 

-মানুষ যদি শ্রেষ্ঠ জীব হয় তাহলে নিকৃষ্ট কে?

এমন প্রশ্ন হয়তো মানবিক কিম্বা সচেতন স্বচ্ছ মনে প্রতিনিয়তই জাগে।

 মানুষের বিবেকবোধ আছে, অনুভূতি আছে, আবেগ আছে, মানুষ অজানাকে জানতে চায়, মানুষের মধ্যে ধর্মমত আছে এবং সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করে শ্রদ্ধাভরে ইত্যাদি গুণের কারণে মানুষ হয়তো শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার।কিন্তু তাহলে কী এসব গুণের পরিপন্থিরায় নিকৃষ্টে সামিল?

 

প্রকৃতপক্ষে এসবের বিপরীতে মানুষের আবেগ-অনুভূতি যখন মানুষের জন্য বিরাট হুমকি হয়ে দাঁড়ায়, যখন মানুষের অত্যাচারে সুশীল সমাজের মানুষগুলি বা নিরহরা জর্জরিত হয়,কিংবা সামর্থ্যবানদের আশ্রয়ে-পশ্রয়ে থাকা সহজভাবে বললে চোখের সামনে থাকা একই সমাজ বা রাস্ট্রে বসবাস করা অসহায়রা যখন রোগে শোকে ধুঁকে ধুঁকে মরে তখন মনে হয় মানুষই পৃথিবীর নিকৃষ্ট জীব!

 

বর্তমানে এই পৃথিবীতে মানুষ চেনা দায়, বিপদে পড়ে দেখেন ভাই কেউ দিবেনা ঠায়। আমি খুব কাজ থেকে দেখেছি কিছু মানুষ স্বার্থের কাছে পুরোটায় পরাস্ত মুখে শুধু লম্বা বুলি, যেন ময়না,তোতা,বুলবুলি।প্রকৃতপক্ষে প্রয়োজনের প্রিয়জন বানিয়ে মিথ্যা মায়াজালে আবদ্ধ করে রাখে ভক্ত, অনুরক্ত বা সহযোদ্ধাদের। হাজারো বিপদে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিলেও শেষমেশ বোধগম্য হওয়া যায় এসব কথার ফুলঝুরি ছিলো লোক ভুলানো মাত্র। সত্যি তু এটাই কাছে থাকলেই সবাই সবসময় আপন হয়না,আবার দূরে থাকলেও সবাই পর হয়না।

 

শত-শত বছর এগিয়ে চিন্তা করলেও প্রতিয়মান হয়,যুগ যুগ ধরে মানুষ আসলেই কি মানুষ হতে পেরেছে? মানুষ হতে চেয়ে বরং মানুষ অমানুষই হয়েছে। বর্ণভেদ প্রথা, দাসপ্রথা, খোঁজাপদ্ধতি, রাজা-জমিদারদের বিকৃত লালসা এবং বর্ণচোরা প্রজন্ম, নিয়মিত খুন-জখম প্রভৃতি মানুষের সমাজব্যবস্থাকে অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ করে।মুখোশের আড়ালে স্বীয় আধিপত্য প্রতিস্থাপন করতে কতইনা সাধু লেবাস ধারণে মরিয়া হয়ে উঠেছে সমাজপতিরা।

 

কিন্তু এরপরও মানুষ বেঁচে আছে এবং পৃথিবীতে তার নিজস্ব ঢং নিয়ে চলমান আছে। মানুষ যতটা খারাপ কিছু করে তার চেয়েও অনেক গুণে খারাপ সে। প্রবল বুদ্ধিমত্তা দিয়ে মানুষ মানুষকেই ঠকাতে চায় বা ঠকিয়ে চলেছে দিনরাত। সাধারণ মানুষেরা, অর্থাৎ খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষেরাই বেশি করে প্রতারিত হয় এ ছাড়াও সরল বিশ্বাসী মানুষেরাও হেরে যায় বারবার মুখে মধু অন্তরে অহিবিষ ধারণকারী একদল খারাপ মানুষের কারণে। অথচ সব মানুষ খারাপ নয়,সবাইযে বিশ্বাস ভাঙ্গে এমনটিও নয়, কিছু কিছু মানুষ খারাপ।

 

মানুষ ভয়ানক প্রতিহিংসাপরায়ণ; প্রতিশোধস্পৃহা মানুষকে মানুষ থেকে আলাদা করে ফেলে। নিজের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে সে বারবার প্রশ্নের সম্মুখীন হয়। চুরি, ছিনতাই, রাহাজানি, ডাকাতি ইত্যাদি ঘটনা অহরহ ঘটে। অস্তিত্বের লড়াইয়ে স্বার্থপর হয় মানুষ এবং কখনোই স্বার্থের বাইরে যেতে চায় না। কিছু কিছু চাওয়া বা আকাঙ্ক্ষা মানুষ সহজাত প্রবৃত্তির মতো ধরে নেয়। নিজের মতো করে সবকিছুই ভাবে বা ভাবতে চায়। এক অদ্ভুত মননশীলতা মানুষের মধ্যে নিয়মিত কাজ করে, যা সামাজিক কিংবা রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে, কোনোখানেই প্রযোজ্য হওয়া উচিত নয়।

 

জীবজন্তুকে নামে-বেনামে চেনা যায়, জানা যায় এবং তাদের প্রকৃতি সম্পর্কে কিছু সুনির্দিষ্ট ধারণা আছে, যা স্বতঃসিদ্ধ প্রক্রিয়ায় চলমান থাকে। কিন্তু মানুষ সব সময়ই ব্যতিক্রম। মানুষের প্রকৃতি গতিবিধি বা অন্যান্য বৈশিষ্ট্য নিয়ে ধারণা করা খুবই কঠিন; একই মানুষ এখনই সহজ আবার পরক্ষণেই সুকঠিন। যে মানুষ ফুলের পাপড়ি ছিঁড়তে কুণ্ঠাবোধ করে, সেই একই মানুষ অবলীলায় আরেকজন মানুষকে খুন করে বা করানোর চিন্তায় মগ্ন থাকে। সজ্জন বলে যাকে জেনে এসেছি, তাকেই দেখি সর্বাধিক দুর্জন ব্যক্তি! মানুষকে নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে আসা বেশ জটিল একটি প্রক্রিয়া।

 

আবার সবচেয়ে খারাপ মানুষ হিসেবে চিহ্নিত ব্যক্তিটিই অন্যান্য মানুষ ও সমাজের উপকারে কাজ করে যাচ্ছে। খুব নিন্দিত ছেলেটিই নিজের জীবন বাজি রেখে কাউকে প্রাণে বাঁচিয়ে তুলছে। সত্যিই ভীষণ এক বিস্ময়কর প্রকৃতির বৈশিষ্ট্য এই ‘মানব’ জাতীয় প্রাণীর।

 

মানুষ ধর্মীয় বিষয়গুলোতে বেশ দুর্বল এবং নিবেদিত, যদিও পৃথিবীতে সৃষ্টিকর্তা বলে কিছু থাকতে পারে—এটা অনেকেই বিশ্বাসই করে না। নীতিতে সুদৃঢ় কঠোর বৈশিষ্ট্যের মানুষেরা ঈশ্বরের নিয়মরীতিতে বরাবরই পাকাপোক্ত। অথচ তারাই প্রকাশ্যে নাস্তিক হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতে গর্ববোধ করে।

 

ধর্মীয় রীতিনীতি পালনে পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষেরই ধারণা পুরোপুরি ধনাত্মক এবং সুযোগসন্ধানী একদল মানুষ ধর্মীয় অনুশাসনকে কৌশলে নিজস্ব স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার রূপে ব্যবহার করে এবং অনেকেই ভণ্ডামির আশ্রয়ে নিজেদের ধর্মযাজক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।

 

ফলে ধর্ম আর অধর্মের পার্থক্য করা কঠিন হয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষ দিশেহারা হয়ে নানাবিধ প্রচলিত মত ও পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়।পক্ষান্তরে ধর্মীয় ভাবাদর্শে গড়া অসংখ্য মানুষ বা সংগঠন যুগ যুগ ধরে মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে।

 

বিচিত্র প্রকৃতির মানুষের ভার বহন করে চলেছে পৃথিবী; পৃথিবী নির্বাক, নিশ্চুপ! সমাজে পাপ বা পুণ্য এসব নিয়ে বিস্তর আলোচনা বা সমালোচনার প্রচলন আছে, যেখানে ধর্মীয় বা শাস্ত্রীয় মতের প্রাধান্যই বেশি। যিনি যা-ই বলুন, মানুষকে মানুষ হতে হলে মানুষের প্রকৃতি বা রুচিবোধের শৃঙ্খলা বা পরিচ্ছন্নতা ফিরিয়ে আনা দরকার সবার আগে। মানুষ যেন আরেকজন মানুষকে মানুষই ভাবতে পারে। মানুষ মানুষকে সত্যিকারে ভালোবাসলেই তার শ্রেষ্ঠত্বকে আলাদা করে প্রমাণের প্রয়োজন নেই।কবির কবিতার এই পঙক্তি কতটুকু  সত্যতা বহন করে তা ভাবলেই সহজ সমাধান-

“কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক কে বলে তা বহুদূর,মানুষেতেই স্বর্গ নরক মানুষেতেই সুরাসুর।

মন্তব্য

সর্বশেষপঠিত

এলাকার খবর

Developed By: Dotsilicon