শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫
 

জাবিতে ‘টেকসই পরিবেশের জন্য দেশজ উদ্ভিজ্জ’ শীর্ষক বার্ষিক বোটানিক্যাল কনফারেন্স অনুষ্ঠিত

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

---

জাবি প্রতিনিধি 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ‘টেকসই পরিবেশের জন্য দেশজ উদ্ভিজ্জ” শীর্ষক বার্ষিক বোটানিক্যাল কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার (৭ই জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান অডিটোরিয়ামের সেমিনার কক্ষে এ কনফারেন্স আয়োজিত হয়। কনফারেন্সটি সকাল ৯টায় শুরু হয়ে ৪টি সেশনের মাধ্যমে বিকাল ৫টায় শেষ হয়।

 

উক্ত কনফারেন্সে প্রধান অতিথি হিসেবে অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য প্রদান করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মো. মাহফুজুর রহমান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সোহেল আহমেদ, ট্রেজারার প্রফেসর ড. মো. আবদুর রব, জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. মাফরুহী সাত্তার, সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. শামসুল আলম, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি ড. সালেহ আহমেদ খান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. রাশিদুল আলম, মেহেরপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ বখতিয়ার উদ্দিন, বাংলাদেশ বোটানিক্যাল সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আজিজুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আগত গবেষক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ।

 

বাংলাদেশ বোটানিক্যাল সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আজিজুর রহমান বলেন, “কোনো দেশের পরিবেশের ভারসাম্যের জন্য সে দেশের ভূমির কমপক্ষে ২৫ শতাংশ প্রাকৃতিক বনভূমি থাকা প্রয়োজন। যেখানে রাশিয়ায় ৫৯.৭৮%, জার্মানিতে ২৪%, ভারতে ২১.৭১% এবং অস্ট্রেলিয়ায় ১৭% বনভূমি রয়েছে। ষাটের দশকের শেষদিকে বাংলাদেশে ১৬% বনভূমি ছিল। জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও অপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা, সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনা নির্মাণ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি কারণে বনাঞ্চল দিন দিন হ্রাস পেয়ে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। যদিও সামাজিক বনায়ন ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে বনায়ন কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রাকৃতিকভাবে জন্মে এমন অনেক বনজ, ফলজ ও ভেষজ উদ্ভিদের সংখ্যা পূর্বের চেয়ে হ্রাস পেয়েছে। এক সময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে গভীর শাল ও গজারি বন ছিল, অনেক বন্যপ্রাণী এমনকি বাঘও বসবাস করত। আজ সেই বনভূমি উজাড় হয়ে বিলুপ্তির পথে রয়েছে। তাই প্রাণ প্রকৃতি রক্ষায় সারাদেশে সঠিক স্থানে সঠিক উপায়ে বনায়ন করতে হবে।”

 

মূল বক্তা হিসেবে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফরেস্টি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেসের প্রাক্তন পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. কামাল হোসাইন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশে জনপ্রতি গাছের সংখ্যা আছে প্রায় ৬টি কিন্তু কানাডায় জনপ্রতি ৮৫০০টি এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৪৫০০টি‌। তাই বাংলাদেশে আমাদেরকে গাছের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। আমরা এখন বিদেশি বিভিন্ন গাছের প্রতি ঝুঁকে পড়ছি, ফলে আকাশমণি ও ইউক্যালিপ্টাসের মতো ক্ষতিকর গাছগুলো পরিবেশে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। অন্যদিকে দেশজ উদ্ভিজ্জ ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে, যা আমাদের জন্য শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাই দেশজ উদ্ভিজ্জ বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে এবং যথাযথ উপায়ে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।”

 

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “আমাদের দেশে ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে কিছু ভালো কাজ হচ্ছে কিন্তু সরকারি পর্যায়ে অনেক কিছু করার আছে। দেশের বোটানিক্যাল গার্ডেনগুলো দেখলে বোঝা যায় না যে, এগুলো বোটানিক্যাল গার্ডেন, না কি ইকোপার্ক, না কি পিকনিক স্পট, না কি মানুষের ঘুরতে যাওয়ার স্থান! এর মূল কারণ হলো - আমাদের ব্যবস্থাপনার দীনতা এবং জনসাধারণের মাঝে বোটানিক্যাল গার্ডেনের গুরুত্ব ও গাম্ভীর্য তুলে ধরতে না পারার ব্যর্থতা। তাই এসব ক্ষেত্রে আমাদের প্রচুর গবেষণা দরকার। ইতোমধ্যে আমরা শালবন হারিয়ে ফেলছি, বাঘ না থাকলে হয়তো এতদিনে সুন্দরবনও হারিয়ে ফেলতাম। সামাজিক বনায়ন করলেও তা কিছুদিন পর কেটে ফেলা হয়। তাই আমাদের প্রাকৃতিক বনায়নে গুরুত্বারোপ করতে হবে। আমাদের বন এলাকা দখল হয়ে আছে, আমরা উচ্ছেদ প্রক্রিয়া শুরু করব।”

 

উল্লেখ্য, এছাড়াও বিভিন্ন বক্তাগণ টেকসই পরিবেশের জন্য দেশজ উদ্ভিজ্জের উন্নয়ন ও বিকাশ সম্পর্কে তাঁদের গবেষণাকর্ম উক্ত বোটানিক্যাল কনফারেন্সে উপস্থাপন করেন।

 

মন্তব্য

সর্বশেষপঠিত

এলাকার খবর

Developed By: Dotsilicon