মাহফুজ রাজা,ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি:
কিশোরগঞ্জে হোসেনপুরে মুক্ত জলাশয় বা বিলের বাহারি জাতের মাছ প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। পরিবেশ-জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তনের ফলে এখন বর্ষা মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় মাছের প্রাকৃতিক উৎপাদন প্রতিনিয়ত কমে যাচ্ছে।
অপরিকল্পিত জলাশয় ভরাট হওয়ায় দেশীয় মাছের বিচরণ ক্ষেত্র দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে। কৃষিতে অধিক ফলনের আশায় মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ ও চায়না দোয়ারি জালের ব্যবহার রেণু পোনা উজাড় করে দিচ্ছে। এতে স্থানীয় হাটবাজারে চিরচেনা দেশি সুস্বাদু প্রজাতির মাছের দেখা মিলছে খুব কম।
বাজারে দেশি প্রজাতির মাছ দেখা গেলেও চাহিদার তুলনায় তা অত্যন্ত স্বল্প। উপজেলার জগদল, পুমদী, গোবিন্দপুর, সাহেবের চর , সূরাটি, বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে দেখা যায়, কৈ, শিং, মাগুর, বোয়াল, পাবদা, টেংরা, সরপুটি, টাকি, চিতল, আইর, শোল, বাইম ও মলার মতো সুস্বাদু দেশি মাছ আগের মতো আর চোখে পড়ে না।
স্থানীয় বাজারগুলো সামুদ্রিক কিংবা পুকুরে চাষ করা হাইব্রিড জাতের মাছে সয়লাব। যে পুকুরে এক সময় সুস্বাদু দেশি মাছের চাষ হতো, সেখানে এখন বিষাক্ত ক্যামিকেল মিশ্রিত খাদ্য প্রয়োগে চাষ হচ্ছে বিভিন্ন হাইব্রিড মাছ। এতে পুকুরের পানি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ছে এবং দেশি মাছের স্বাদ হারিয়ে যাচ্ছে।
উপজেলার জগদল এলাকার জেলে আল আমিন বলেন, হোসেনপুরে দিন দিন দেশি মাছের চাহিদা বাড়ছে। তবে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না।হোসেনপুরে অপরিকল্পিত নগরায়ন প্রভাবে জলাশয় ভরাট হওয়ায় দেশি মাছের বিচরণ ক্ষেত্র দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে।
মাছ ব্যবসায়ী মামুন বলেন, দেশি মাছের প্রচুর
চাহিদা থাকলেও প্রতিনিয়ত উৎপাদন কমছে। উপজেলা বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আলামিন ভূঁইয়া বলেন, একসময় উঁচু জমিতে ফসল আর নিচু জমিতে মাছ চাষ হতো। শুষ্ক মৌসুমে নিচু জমির পানি উঁচু জমিতে কৃষি কাজে ব্যবহৃত হতো। কিন্তু বৈরী আবহাওয়া ও অপরিকল্পিত নগরায়ন প্রভাব পড়ছে ফসল উৎপাদন এবং মাছ চাষে। মুক্ত জলাশয়ে আর দেশীয় মাছ পাওয়া যাচ্ছে না।
গত কয়েক বছর বর্ষা মৌসুমে প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। ফলে খাল-বিলগুলোতে পানি না আসায় কৃষি ছাড়াও দেশীয় প্রজাতির মাছের উৎপাদনে প্রভাব পড়ছে।
হোসেনপুর পৌরসভার হাজী আফতাব উদ্দিন মেমোরিয়াল স্কুলের পরিচালক বুলবুল আহমেদ বলেন , পুকুরগুলো এখন হাইব্রিড মাছ চাষিদের দখলে। এতে বিলুপ্তির পথে প্রকৃতির নিরীহ পাখি ডাহুক এবং হুমকিতে রয়েছে দেশীয় মাছের জীবনচক্র। বাজারে এখন দেশীয় প্রজাতির মাছের আকাল চলছে। ক্রেতারা খুঁজেও দেশি মাছ পাচ্ছেন না।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সারোয়ার হোসেন জানান, দেশীয় প্রজাতির কিছু মাছ পুকুরে চাষ হয়, তবে পরিমাণ খুবই কম এবং দাম বেশি। অপরিকল্পিত নগরায়ন ও জলাশয় ভরাটের কারণে দিন দিন দেশীয় মাছের বিচরণ ক্ষেত্র হারিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও জানান, উপজেলা মৎস্য অফিস দেশি সুস্বাদু মাছ সংরক্ষণে চাষিদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে।
মন্তব্য