রাবি প্রতিনিধি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. আল আমিন মিয়া (২৪) ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে মামলার আসামি হয়েছেন। পরিবারের জমি নিয়ে বিরোধের জেরে তাঁর ফুফু মোছা. জরিনা বেগম একটি মামলা দায়ের করেন, যেখানে আল আমিনের বিরুদ্ধে তাঁর কন্যার কাপড় টানাহেঁচড়া করে বিবস্ত্র করার অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে আল আমিন দাবি করছেন, ঘটনার দিন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসে ছিলেন এবং তার পক্ষে একাডেমিক প্রমাণও রয়েছে।
মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলার সৈয়দপুর মনছুরছড়া গ্রামের বাসিন্দা মোছা. জরিনা বেগমের সঙ্গে তাঁর ছেলে জয়নাল আবেদীনের জমিজমা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক দ্বন্দ্ব চলছিল। এ নিয়ে গতবছরের ২ ডিসেম্বর বিকেল ৫টায় সংঘর্ষের অভিযোগ তোলেন জরিনা বেগম।
মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, তাঁর ছেলে, পুত্রবধূ, নাতী, বেয়াই ও বেয়াইয়ের ছেলে তাঁকে মারধর করেছেন এবং তাঁর কন্যাকে জনসমক্ষে বিবস্ত্র করেছেন। মামলায় ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে আল আমিনের বোন বিলকিছ বেগমকে, ২ নম্বর বিলকিছের স্বামী জয়নাল আবেদীন, ৩ নম্বর আল আমিনের বাবা বদশা মিয়া, ৪ নম্বর আল আমিন মিয়া এবং ৫ নম্বর জয়নালের ছেলে বিপ্লব মিয়া।
মামলার এজাহারে বাদিনী উল্লেখ করেছেন, ‘তাঁর স্বামী ১৪ বছর আগে মারা গিয়েছেন। স্বামী মারা যাওয়ার পর জমিজমা ও তাঁর ছোটো দুই মেয়ে এবং এক ছেলের দেখাশোনার দায়িত্ব তাঁর উপর অর্পিত হয়। একপর্যায়ে সব জমি জয়নাল একাই চাষাবাদ করবে বলে তার স্ত্রী তাকে প্ররোচিত করে। বাদিনী এর প্রতিবাদ করলে ছেলে জয়নাল তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। এরপর বাদিনী মনুরছড়া মৌজায় জমি ক্রয় করে আলাদাভাবে বসবাস শুরু করেন। গতবছরের ২ ডিসেম্বর স্বামীর জমিতে চাষ করা ধান শ্রমিক দিয়ে কেটে স্বামীর বাড়িতে নিয়ে গেলে আসামিগন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন’
তবে মামলার ৪ নং আসামী অভিযুক্ত রাবি শিক্ষার্থী মো. আল আমিন মিয়া জানান, মামলায় উল্লেখ করা তারিখ ও সময়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শেষে শহীদ জিয়াউর রহমান হলের ৪৪৬ নম্বর কক্ষেই ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি গত জুলাইয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হওয়ার পর থেকে গ্রামে যাইনি। অথচ মামলায় আমাকে আমার ফুফাতো বোনের বস্ত্রহরণের ঘটনায় জড়ানো হয়েছে! এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও হয়রানিমূলক। আমি ন্যায়বিচার চাই।’
এ বিষয়ে তাঁর বিভাগীয় সভাপতি অধ্যাপক ড. দিল-আরা-হোসেন বলেন, ‘আল আমিন ২ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিল। ওই দিন সে বিভাগের ৩১০ কোর্সের ক্লাস করেছে।’
এ বিষয়ে জানতে বাদী মোছা. জরিনা বেগমের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ফোন অন্য এক নারীর কাছে হস্তান্তর করেন। ওই নারী নিজেকে বাদিনীর মেয়ে পরিচয় দিয়ে বলেন, ও (আল আমিন) আমার মাকে মার্ডার করেছে।’
মার্ডার করলে আপনার মা বেঁচে আছেন কিভাবে? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমার মায়ের রক্ত বের করেছে। কপালে কোপ মেরেছিল। আমাদের কাছে ভিডিও-প্রমাণ সবই রয়েছে। ওরা আমাকে ও আমার মাকে মারধর করেছে।’ এরপর তিনি আর কথা বলতে চাননি এবং কল কেটে দেন।
এদিকে, স্থানীয় মান্যবর ব্যক্তি ও ডিসকভারি প্রি-ক্যাডেট স্কুলের শিক্ষক মো. রবিউল ইসলাম জানান, আমরা সালিশে বসেছিলাম। এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, ঘটনার সময় শুধু জয়নালের স্ত্রী ও ছেলে বাড়িতে ছিল। জরিনা বেগম জোর করে বাড়িতে ঢুকতে গেলে গেটে থাকা টিনে লেগে কপালে সামান্য ক্ষত হয়।
তিনি বলেন, জয়নাল প্রায়ই বিভিন্ন কারণে তাঁর মা-কে গালিগালাজ করতো। ঘটনাটি পারিবারিক বিবাদের অংশ এবং মীমাংসার পথে ছিল। কিন্তু স্থানীয় কিছু লোকজন বাদিনীকে দিয়ে মামলা করিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জয়নাল ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করে। ঘটনার দিন সে ঢাকাতেই ছিলো। আর তাঁর শ্যালক ছিলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমরা যেদিন সালিশে বসেছিলাম, সেদিন জয়নালের বাড়ির আশেপাশের লোকজনই আমাদের এই তথ্য জানিয়েছে। আমরা চাই না, মিথ্যা মামলায় কেউ হয়রানির শিকার হোক।
যুগের কণ্ঠস্বর/এইচএসএস
মন্তব্য