বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ ২০২৫
 

জুলাই সন্ত্রাসীকে হাসপাতালে বসে পরীক্ষার সুযোগ করে দিলেন অধ্যাপক হরে কৃষ্ণ কুন্ডু

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ৫ মার্চ ২০২৫

---

জাবি প্রতিনিধি: গত বছরের জুলাই মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীদের উপর হামলায় অংশগ্রহণকারী এক ছাত্রলীগ নেতাকে হাসপাতালে বসে বিশেষ পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে লোকপ্রশাসন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক হরে কৃষ্ণ কুন্ডুর বিরুদ্ধে। পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ইয়া রাফিউ শিকদার আপন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭ ব্যাচের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী। তবে বর্তমানে ৪৯ ব্যাচের সাথে শিক্ষাকার্যক্রম চলমান রেখেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা যায়, ইয়া রাফিউ শিকদার ঢাকার একটি হাসপাতালে বসে পরীক্ষা দেয়ার আবেদন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী কোনো শিক্ষার্থী বিশেষ পরীক্ষা দিতে চাইলে বিভাগীয় সভাপতির মাধ্যম হয়ে উপাচার্য বরাবর আবেদন করতে হয়। সেই আবেদনে বিভাগীয় সভাপতি, মেডিকেল অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ প্রমাণ যাচাইপূর্বক সুপারিশ করলে উপাচার্য পরীক্ষার অনুমতি দেন।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইয়া রাফিউ শিকদার আপন জুলাই আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের উপর হামলায় সরাসরি অংশগ্রহণকারী। আন্দোলন চলাকালে ফ্যাসিস্ট হাসিনা শিক্ষার্থীদের রাজাকার ট্যাগ দেয়ার পর গত ১৪ জুলাই রাতে শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদ জানালে আপন বিশ্ববিদ্যালয়ের তাজউদ্দীন আহমেদ হলের কক্ষে কক্ষে গিয়ে শিক্ষার্থীদের মারধর ও হল থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দেন। এছাড়া হলের ফেসবুক গ্রুপে শিক্ষার্থীদের হুমকি দিয়েও পোস্ট দেন তিনি। যার একটি স্ক্রীনশট এই প্রতিবেদকের হাতে এসে পৌছেছে।

বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানায়, আপন ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে পলাতক রয়েছে। এর আগেও চুরি-ছিনতাইকালে ধরা পড়ায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছিল। এক পর্যায়ে আদালতের নির্দেশে বিশেষ বিবেচনায় তার ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে সে ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সাথে কন্টিনিউ করছে। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ৪৯ ব্যাচের চতুর্থ বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা শুরু হয়। আপনের আবেদনের প্রেক্ষিতে হাসপাতাল থেকে তাকে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ করে দেয়ার সুপারিশ করেছেন বিভাগীয় সভাপতি হরে কৃষ্ণ কুন্ডু। তবে আপন অসুস্থ হওয়ার মিথ্যা নাটক ও জাল ডকুমেন্ট বানিয়ে পরীক্ষার আবেদন করেছে বলে দাবি বিভাগের শিক্ষার্থীদের।

বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা ইতোপূর্বেও ইয়া রাফিউ শিকদারের বিচারের দাবি জানিয়েছি। একজন হামলাকারী এভাবে পার পেয়ে গেলে তার মতো বাকিরাও অপরাধ করতে প্রশ্রয় পাবে। আর বিভাগের সভাপতি সবকিছু জেনেশুনে কিভাবে পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। তিনি যদি জেনেশুনে ছাত্রলীগ পুনর্বাসনের দায়িত্ব নিয়ে থাকেন, তাহলে তাকেও জবাবদিহীতার আওতায় আনার দাবি জানাই।

এদিকে, আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারীকে পরীক্ষায় বসতে সুযোগ করে দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে লোকপ্রশাসন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক হরে কৃষ্ণ কুন্ডু বলেন, ‘একজন পরীক্ষা দিচ্ছেন। তবে এ বিষয়ে আমি বলতে পারব না। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আর পরীক্ষা কমিটির সভাপতি বিস্তারিত বলতে পারবেন।’

তবে পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নুরুল আমিন বলেন, ‘কে পরীক্ষা দিবে বা কে দিতে পারবেনা এটি নির্ধারণের এখতিয়ার পরীক্ষা কমিটির নাই। কোনো শিক্ষার্থী আবেদন করলে বিভাগীয় সভাপতি, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ সংশ্লিষ্টরা যাচাই-বাছাই করে সুপারিশ করলে উপাচার্য পরীক্ষার অনুমতি দেন। এখানে তো বিভাগীয় সভাপতি সুপারিশ করেছেন। আমরা প্রশ্নপত্র মডারেশন, পরীক্ষা রুটিন অনুযায়ী সম্পন্ন, খাতা মূল্যায়ন ও ফলাফলের কাজ করতে পারি।’

আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই করে সুপারিশ করেছেন কিনা তা জানতে পরবর্তীতে লোকপ্রশাসন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক হরে কৃষ্ণ কুন্ডুকে পুনরায় জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা তো আবেদন করে, আমরা সুপারিশ করে দিই।’

 

যুগের কণ্ঠস্বর/এইচএসএস

মন্তব্য

সর্বশেষপঠিত

এলাকার খবর

Developed By: Dotsilicon