জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের এক শিক্ষার্থীর করা নম্বর জালিয়াতির অভিযোগের বিষয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
চলতি বছরের ২৭ মার্চ প্রকাশিত অর্থনীতি বিভাগের ২০১৮ সালের স্নাতকোত্তর পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল ঘোষণা এবং পুনঃপরীক্ষণ/পুনঃমূল্যায়নপূর্বক ফের ফল প্রস্তুতের ব্যর্থতা কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে হাইকোর্টের রুলে। সেইসঙ্গে বিবাদীর(জারমিন রহমান) কেন ২০১৮ সালের স্নাতকোত্তর পরীক্ষার ফল পুনঃপরীক্ষণ/পুনঃমূল্যায়নের নির্দেশ দেওয়া হবে না সেটিও জানতে চেয়েছেন আদালত।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান, কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের ডিন, অর্থনীতি বিভাগের সভাপতি এবং ২০১৮ সালের স্নাতকোত্তর পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির সভাপতিকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলেছে আদালত।
নাম্বার টেম্পারিং সংক্রান্ত রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে সোমবার (১ আগস্ট) বিচারপতি জাফর আহমেদ ও বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।
রিটের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান।
এর আগে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ২০২১ সালে প্রকাশিত স্নাতকোত্তর পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল ঘোষণায় নম্বর টেম্পারিং এবং অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে রিট দায়ের করেন জারমিনা রহমান।
ইচ্ছাকৃত ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে নম্বর কম দেওয়া, বহিঃস্থ পরীক্ষক দ্বারা মূল্যায়ন ব্যতিরেকে শুধু অভ্যন্তরীণভাবে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ফল প্রস্তুত ও অনিয়ম করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষার জন্য প্রণীত অর্ডিনেন্সের বিভিন্ন ধারা লঙ্ঘন করে নম্বর জালিয়াতি ও অনিয়ম করার অভিযোগ রয়েছে রিটে।
আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান গণমাধ্যমকে জানান, রিটকারী অনার্সে সর্বোচ্চ ৩.৮২ সিজিপিএ অর্জন করে প্রথম হলেও মাস্টার্সে তাকে মাত্র ৩.৪৫ সিজিপিএ প্রদান করা হয়েছে। এতে করে পিটিশন দায়েরকারী ছাত্রী উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে আবেদন করার নূন্যতম যোগ্যতা হারিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এবং উক্ত পরীক্ষা কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে এই নম্বর জালিয়াতি ও অনিয়মের অভিযোগ করা হয়। ইতোপূর্বে, ফল ঘোষণার পর মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরা ফল পুনঃমূল্যায়ন চেয়ে অবস্থান কর্মসূচি ও আন্দোলন করলে এবং প্রতিকার চেয়ে কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করে প্রতিকার না পাওয়ার প্রেক্ষিতে এই রিট পিটিশন দায়ের করা হয়।
হাইকোর্টের রুলের বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করা শিক্ষার্থী জারমিন রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের অর্থনীতি বিভাগ ও প্রশাসনের কাছে প্রথমে আমাদের ফলাফল পুনঃমূল্যায়নের আবেদন জানাই কিন্তু কোন পদক্ষেপ দৃশ্যমান করেননি তারা। আমার সহপাঠিরাও অভিযোগ জানিয়েছিলো কিন্তু আদালতে তারা যেতে পারেননি কেননা অনেকেরই চাকুরির বয়সসীমা শেষ হয়ে যাচ্ছে তাই। সেই সঙ্গে সকল সহপাঠীদের সম্মতিতেই ন্যায় বিচারের জন্যে উচ্চ আদালতে রিট করি। আমি মহামান্য আদালতের কাছে সুবিচার প্রত্যাশা করি।
এর আগে বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলামের কক্ষে তালা লাগিয়ে বিক্ষোভ করে ২০২১ সালে স্নাতকোত্তর শ্রেনীর ফলাফল প্রকাশিত হওয়া শিক্ষার্থীরা।
তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তোলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখরের সঙ্গেও স্বাক্ষাত করে শিক্ষার্থীরা। তাছারা অভিযুক্ত শিক্ষক নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগও রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছিক এক শিক্ষক বলেন, নজরুল স্যার স্বেচ্ছাচারী তার প্রমাণ আমরা আগেও দেখেছি। এক শিক্ষার্থীকে শিক্ষক বানাতে আরেক যোগ্য শিক্ষার্থীকে প্ল্যানিং এই বাদ দিয়ে দিয়েছে। এই মানুষটা নিজে যা ভাবে সেটিই করে । আমাকেও হুমকি দিয়েছিলো দেখে নেবার।
কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
মন্তব্য