লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান অফিস সহকারী(বড় বাবু) মাহবুব আলম লিকু’র লালমনিরহাট শহরস্থ বড় বাড়ি নিয়ে শুরু হয়েছে নানান গুঞ্জন।
জানা গেছে, লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান অফিস সহকারী(বড় বাবু) মাহবুব আলম লিকু। তিনি লালমনিরহাট শহরের টিএন্ডটি পাড়ায় গত দুই বছর আগে ৫তলা বিশিষ্ট একটি আলিসান বাড়ি নির্মাণ করে জেলাবাসীকে চমক দেখিয়েছেন। কারন জেলা শহরের যে তিনটি দৃষ্টিনন্দন আলিসান বাড়ি রয়েছে তার মধ্যে এটি অন্যতম। আর তাই জেলা জুড়ে গুঞ্জন উঠেছে বড় বাবুর এই বড় বাড়ি নিয়ে। সকলের মুখে অফিস সহকারী পদে চাকুরী করে প্রায় দুই কোটির অধিক মুল্যের বিলাসবহুল বাড়ি তৈরীর অর্থের উৎস কোথায়? তবে বাড়ির মালিক মাহবুব আলম লিকু বলেন, কোটি টাকা হাউজিং ঋনে তিনি বাড়িটি নির্মান করেছেন। যা এখনও কিস্তি পরিশোধ হয়নি।
মাহবুব আলম লিকু এর আগে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের প্রধান অফিস সহকারীর দায়িত্ব পালন করেন। সেখানে সরকারী অর্থ আত্নসাৎসহ নানান অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। গত ২০১৪-১৫ অর্থ বছরের ভুয়া বিল ভাউচারে সদর হাসপাতালের ১৪ লক্ষ ৯৯ হাজার ৬৫৬ টাকা আত্নসাৎ করেন মর্মে সিভিল অডিট আপত্তি তুলেন। যার প্রেক্ষিতে গত ২০১৬ সালের ২৬ জুলাই ২৯৭৯/৫ স্মারক মুলে তদন্ত কমিটি গঠন করেন তৎকালিন সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবয়াক ডা. নুরুজ্জামান আহম্মেদ। সেই তদন্ত কমিটি উক্ত অর্থ আত্নসাতের সতত্যা পাওয়ায় আত্নসাৎকৃত অর্থ ট্রেজারী চালান মুলে ফেরৎ দিতে নির্দেশ দেয়া হয়। কয়েক দফায় সময় নিয়ে জমি জমাসহ আদিতমারীস্থ বসবাসের একমাত্র বাড়িটিও বিক্রি করে সেই অর্থ ফেরৎ দিয়ে রক্ষা পান প্রধান অফিস সহকারী মাহবুব আলম লিকু। এ সময় শাস্তিমুলক বদলিসহ তিনি দীর্ঘ দিন সাময়িক বরখাস্তও ছিলেন।
এত বড় অংকের সরকারী টাকা আত্নসাৎ করে শাস্তিমুলক বদলি ও সাময়িক বরখাস্ত থাকার পরেও হঠাৎ এত বড় আলিসান বাড়ি তৈরীর বিষয়টি জেলাবাসীকে অবাক করে। আত্নসাৎকৃত সরকারী অর্থ ফেরৎ দিতে প্রায় স্বলহীন হয়েছিলেন মাহবুব আলম লিকু। সেই বড় বাবু হঠাৎ বড় বাড়ি নির্মানের অর্থের উৎস নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়।
অবশেষে ক্ষমতার জোরে সকল কিছু ম্যানেজ করে বরখাস্তদেশ প্রত্যাহারসহ নিজ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পদায়ন নেন মাহবুব আলম লিকু। সেখানেও বিদ্যুৎ বিলসহ নানান অনিয়মের অভিযোগ উঠলে আবারও আলোচনায় আসেন তিনি। অবশেষে সেখান থেকে বদলি নিয়ে নিজ এলাকা আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি হয়ে আসেন। বর্তমান কর্মস্থলে যোগদানের পর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌফিক আহম্মেদের সাথে বেশ সখ্যতা গড়ে তুলেন কৌশলী প্রধান অফিস সহকারী মাহবুব আলম লিকু। সম্মিলিত ভাবে এ হাসপাতালেও দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলেন বলে স্থানীয় ও কর্মচারীদের দাবি।
টাকা ছাড়া কোন ফাইলে কাজ হয় না। বড় কর্তাকে ম্যানেজ করায় নিজের ইচ্ছেমতই করেন সকল কার্যক্রম। তার অনিয়ম বা হয়রানীর প্রতিবাদ করলে বড় কর্তাকে দিয়ে সেই কর্মচারীকে শোকজ বা উল্টো হয়রানী করা হয় বলেও অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। মুলত স্থানীয় কর্মচারী হওয়ায় এলাকার প্রভাবখাটিয়ে এমন অনিয়ম করেন বলেও দাবি ভুক্তভোগিদের।
গত অর্থ বছরের শেষ দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌফিক আহম্মেদের সাথে সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে মাহবুব আলম লিকুর। এ কারনে আর্থিক দায়িত্ব থেকে তাকে সড়িয়ে দেয়া হয়। তার বিরুদ্ধে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌফিক আহম্মেদ দুর্নীতি দমন কমিশনে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন বলেও একটি সুত্র নিশ্চিত করেছে। নিজেকে বাঁচাতে তখন স্থানীয় কর্মচারীদের নিয়ে পৃথক গ্রুপ তৈরী করেন মাহবুব আলম। প্রকাশ্যে দুইটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে হাসপালের সেবার মান প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠে। একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌফিক আহম্মেদ অপরটিতে নেতৃত্ব দেন প্রধান অফিস সহকারী মাহবুব আলম।
মাহবুব আলম লিকুর একজন সহকর্মী নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, টাকা ছাড়া কোন কাজ করেন না প্রধান অফিস সহকারী। প্রতিবাদ করেও কোন কাজ হয় না। টাকার বিনিময়ে সকল কিছু ম্যানেজ করেন তিনি। নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় হাসপাতালের দুই গ্রুপের টানাটানিতে আমরা অতিষ্ট হয়ে পড়েছিলাম। সাম্প্রতি তাদের মাঝে সমোঝোতা হয়েছে। তাই আবারও শুরু হয়েছে তাদের অনিয়ম। মুলত দুই গ্রুপেই দুর্নীতির বরপুত্র। তাদের অপসরন না হলে পরিবেশ শান্ত হবে না।
লালমনিরহাট শহরের একজন বাসিন্দা বলেন, বাড়িটির নির্মাণের বিছুদিন আগেও চা খাওয়ার টাকা ছিল না। অথচ হঠাৎ বিশাল বাড়ি নির্মাণের টাকা কোথায় পেলেন। আমরা অবাক। কেরানী পদে চাকুরী করে সন্তানদের বড় প্রতিষ্ঠানের লেখাপড়ার খরচ দিয়েও এত বড় বাড়ি নির্মাণ দুর্নীতি ছাড়া অসম্ভব বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তার একজন প্রতিবেশি দাবি করেন, আলিসান এ বাড়িতে ভাড়া থাকেন উচ্চ পদস্থ বিভিন্ন কর্মকর্তা ও বিচারকরা। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন তদবিরও করছেন তিনি। তাই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মানুষ আসেন এ বাড়িতে। এজন্য তার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করেন না। মাহবুব আলম লিকু ভাড়ার সাথে তদবির বাণিজ্যও করেন বলে দাবি তার।
তবে বাড়িটির মালিক আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান অফিস সহকারী মাহবুব আলম লিকু বলেন, সরকারী সকল পাওনা পরিশোধ করেছি। বাড়িটি কোটি টাকা হাউজিং ঋনে নির্মান করেছি। এছাড়াও বিভিন্ন ব্যাংকেও ঋন করেছি। বাড়ি নির্মান করতে গিয়ে আমি ঋনগ্রস্থ হয়ে পড়েছি।
শাহিনুর ইসলাম প্রান্ত, লালমনিরহাট
মন্তব্য