পশ্চিম ইউরোপজুড়ে একের পর এক দাবদাহে ইংল্যান্ডের কয়েকটি অংশে প্রচণ্ড খরা দেখা দিয়েছে এবং ফ্রান্স ও পর্তুগালে দাবানলের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। একটি বিশাল দাবানল থেকে ফ্রান্সকে উদ্ধারের জন্য শুক্রবার পুরো ইউরোপ থেকে দমকলকর্মীরা দেশটিতে হাজির হয় বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। কয়েক সপ্তাহ ধরে ইউরোপের অধিকাংশ অঞ্চলজুড়ে তীব্র দাবদাহ চলছে। এ পরিস্থিতিতে জার্মানির রাইন নদীর পানির স্তর হ্রাস পেয়েছে এবং ব্রিটেনের টেমস নদীর উৎস পূর্ববতী বছরের তুলনায় আরও নিচের দিকে শুকিয়ে যেতে দেখা গেছে। স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ফ্রান্সের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলীয় জিহঁন্দে কয়েকদিন ধরে চলা একটি দাবানলকে নিয়ন্ত্রণে আনার পরও উচ্চ তাপমাত্রা ও ক্রমবর্ধমান খরার কারণে নতুন দাবানল শুরু হওয়ায় উচ্চ ঝুঁকি বিরাজ করছে। দাবানলে এ এলাকার কয়েক হাজার হেক্টর এলাকা পুড়ে গেছে এবং ১০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এই অঞ্চলে দাবানলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ফ্রান্সকে সাহায্য করার জন্য জার্মানি, রোমানিয়া, গ্রিস ও অন্যান্য দেশ থেকে আসা দমকলকর্মীরা যোগ দিয়েছেন। তারা এ অঞ্চলের পাশাপাশি ফ্রান্সের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় ব্রিটানিসহ অন্যান্য অঞ্চলেও দাবানলের বিরুদ্ধে লড়াইতে যোগ দিয়েছেন। জিহঁন্দে রোমানিয়ার দমকলকর্মীদের প্রধান ক্রিস্তিয়ান বুহাইয়ানু বলেন, “এটা দেশের ব্যাপার না, আমরা দমকলকর্মী এবং আমরা এখানে সাহায্য করতে এসেছি।”
তাপপ্রবাহের মধ্যে ইংল্যান্ডের কয়েক জায়গায় খরা ঘোষণা গত মাসে কয়েক সপ্তাহ ধরে বিশাল এক দাবানলের বিরুদ্ধে লড়াই করার একটি এলাকায় তাদের তাদের এ সমর্থনকে স্বাগত জানিয়েছেন ফ্রান্সের দমকলের কমাড্যান্ট স্তেফানি মার্তা। তিনি বলেন, “এক মাস ধরে লড়াই করার পর আমাদের দমকলকর্মীরা ক্লান্ত। আমাদের জন্য এটি সত্যিই খুব ভালো সমর্থন, এতে আমরা অন্য অভিযানগুলোতেও মনোযোগ দিতে পারবো।” ফ্রান্সজুড়ে চলা তৃতীয় দাবদাহ রোববার শেষ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে স্থানীয় বাসিন্দারা কিছুটা স্বস্তি পাবেন বলে আশা করছেন। কিন্তু ইতোমধ্যেই দাবানলে ৭৪০০ হেক্টর বনভূমি পুড়ে গেছে। দমকলকর্মীরা একে ‘দানব দাবানল’ বলে আখ্যায়িত করেছে। পর্তুগালের মধ্যাঞ্চলে সাত দিন ধরে বিশাল একটি দাবানলের বিস্তৃতি ঘটছে। এ দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৬০০ দমকলকর্মী কাজ করছে, তাদের সাহায্য করছে ১৩টি ওয়াটারবম্বিং বিমান। এ দাবানলে পর্তুগালের সেহা দ্যা ইস্ত্রেলা জাতীয় উদ্যানের প্রায় ১৫ শতাংশ পুড়ে ধ্বংস হয়ে গেছে। এদিকে জার্মানির রাইন নদীর পানির স্তর আবার হ্রাস পেয়েছে, এতে কিছু জাহাজ আর চলতে পারছে না বলে সংশ্লিষ্ট লোকজন জানিয়েছেন। ব্রিটেনেও তীব্র দাবদাহ চলছে। দেশটির সরকার ইংল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলে খরা চলছে বলে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাজ্যের আবহাওয়া অধিদপ্তর বৃহস্পতিবার থেকেই ‘তীব্র তাপপ্রবাহের’ পূর্বাভাস থাকায় চার দিনের জন্য ‘চরম তাপমাত্রার’ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করে রেখেছে। এ সময়ে তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে থাকবে। কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যেতে পরে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
মন্তব্য