বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪
 

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে প্রকাশিত ফলাফলে আবারও অনিয়ম

ক্যাম্পাস
প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০২২

---উচ্চ শিক্ষায় পরীক্ষার ‘নাম্বার টেম্পারিং’ একটি  আতঙ্কের নাম। এমন ঘটনা বারবার ঘটে যাচ্ছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সাথে। অর্থনীতি বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণীর ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের প্রথম সেমিস্টারের প্রকাশিত ফলাফলে নাম্বার টেম্পারিং এর অভিযোগে আলোচনায় বসেছে বিভাগটির শিক্ষক শিক্ষার্থীরা।


বিভাগটির স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের প্রথম সেমিস্টারের ফলাফল প্রকাশিত হয় গত ১৭ আগস্ট। সংশ্লিষ্ট সূত্রে ফলাফল সম্পর্কে জানা যায়, অভ্যন্তরীণ পরীক্ষক ও বহিঃস্থ পরীক্ষকের নম্বরে পার্থক্যের পরিমান সরবোচ্চ ২০ এবং গড়ে ৮ থেকে ১০ নম্বর।একজন পরীক্ষার্থী ৭৫ নম্বর পেলেও  তার মোট নম্বর দেয়া হয়েছে ৫৪ (১৪১৫১৮১৯৫১১) রোল।


অপর এক পরীক্ষার্থী (১৪১৫১৮১৯৫১৭) মোট ৭৪.৫ পেলেও ফলাফলে দেখানো হয়েছে ৫৪। একইরকম ঘটনা ঘটেছে ১৪১৫১৮১৯৫৪৩ ও ১৪১৫১৮১৯৫৪৪ এর ক্ষেত্রেও। এরকম নম্বরের পার্থক্য দৃশ্যমান হয়েছে প্রকাশিত ফলাফলে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, এই নাম্বার গুলো শিক্ষার্থীদের জানার সুযোগ নেই। এমনকি মার্কশিট উত্তোলন করলেও জানতে পারবে না। তাই এই সুযোগে যে কারো ফলাফল কমিয়ে রাখলে তা বোঝার উপায় নেই। যখন শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানায় কিংবা প্রতিকার চায় তখন বেশী চাপ সৃষ্টি হলে এগুলো সংশোধন করে আবার প্রকাশ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। এটা ভালো কোন চর্চা নয়।

এমন ফলাফলের প্রতিবাদ জানাতে বিভাগটির ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা বিভাগে গেলে আলোচনায় বসে বিভাগীয় প্রধান ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম যেখানে উপস্থিত ছিলেন পরীক্ষা  কমিটির সভাপতি আলফারুন্নাহার রুমা।

যদি ফলাফলে সমস্যা থাকে তবে পুনরায় ফলাফল প্রকাশ করা হবে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে শিক্ষার্থীদের।


এখানেই শেষ নয়, ২০১৪- ২০১৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক পর্যায়ে ৩.৫০ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিলো ১১ জন বিপরীতে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ৩.৫০ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ জন। এমন ফলাফল নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে বিভাগটির একাধিক শিক্ষার্থী।


এদিকে স্নাতক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী স্বর্নপদক পাওয়া শিক্ষার্থী আফরোজা খাতুনের ফলাফলও এসেছে ৩.৫০ এর নীচে।

শিক্ষার্থীরা বলেন তাদের প্রত্যাশিত ফলাফল তারা পায়নি। বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে। তারা বিবেচনায় নিয়ে দেখবে কোন ত্রুটি আছে কিনা। থাকলে সেটির সমাধান করে পুনরায় ফলাফল জানাবেন।


এদিকে পুনারায় ফলাফল প্রকাশের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত স্নাতকোত্তর শ্রেণির ভাইবায় অংশ নেবেনা বলেও আলোচনায় শিক্ষকদের জানিয়েছে উপস্থিত থাকা শিক্ষার্থীরা। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে আলোচনায় বসা একাধিক শিক্ষার্থী।


এর আগে একই বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষারথীরা নাম্বার টেম্পারিং এর অভিযোগ এনে বিভাগীয় প্রধানকে আটকে প্রতিবাদ জানায়। যা নিয়ে কয়েকটি পত্রিকায়  সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিলো। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করে। সেই ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মধ্যে জারমিনা রহমান উচ্চ আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে রিট করলে আদালত ব্যাখ্যা জানতে চেয়ে চলতি বছরের ১ আগস্ট রুল জারি করেন। যেখানে বিভাগীয় প্রধান, ডিন, পরীক্ষা কমিটির সভাপতি, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এবং উপাচার্যের থেকে ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন আমরা নজরুল স্যারের কাছে গেলে, স্যার আমাদের বলেছিলেন, আমি হাবীবকে চাকুরি দিয়েছি। আর সে আমার বিরুদ্ধে যায় আমি দেখবো সে (হাবীবের মেয়ে) কিভাবে শিক্ষার্থী হয়।


অর্থনীতি বিভাগের এমন অবস্থা নিয়ে রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবীর বলেন, ফলাফল প্রকাশের পর এটি আর বিভাগের থাকে না ; সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ হয়ে যায়। তাই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হলে প্রশাসনকে অবগত করতে হবে। এর বাইরে কিছু করার থাকবে না।


ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আব্দুল হালিম বলেন, ফলাফল প্রকাশিত হলে সেখানে নাম্বার যোগ বা বিয়োজনের সুযোগ থাকে না তবে ভুল থাকলে কেবল যোগ বিয়োগ হিসাব করতে পারবে। এমনকি মোট নাম্বার পরিবর্তনের ক্ষমতাও বিভাগের থাকবে না। এবিষয়ে কোন সংশোধন করতে হলে প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে করতে হবে।


পরীক্ষায় ফলাফলের অবস্থা এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার বিষয়ে জানতে চাইলে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তর শ্রেণীর পরীক্ষা কমিটির সভাপতি আলফারুন্নাহার রুমা গবেষণা কাজে ব্যস্ত থাকায়, মন্তব্য করতে পারবেনা বলেই ফোন রেখে দেন। অন্যদিকে একাধিকবার কল করেও যোগাযোগ করা যায়নি বিভাগটির প্রধান অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম স্যারের সঙ্গে ।


প্রসঙ্গত, ১ আগস্ট হাইকোর্টের রুল জারি করার বিষয়ে এখনো ব্যাখ্যা দেয়নি বিভাগটির প্রধান সহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ।

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিঃ   

মন্তব্য

সর্বশেষপঠিত

এলাকার খবর

Developed By: Dotsilicon