অভয়নগর প্রতিনিধি:- মনিরুজ্জামান মিল্টন,
যশোরের অভয়নগরের সরকার গ্রুপের ঘাটের নৈশপ্রহরী মিন্টু তরফদার হত্যার দুই দিনের ব্যবধানে রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। একই সাথে হত্যায় জড়িত দুই আসামীকে মেহেরপুর জেলার গাংনী থানার আসামী রায়হানের খালার বাড়ি কাজিপুর নিমস্মরণ পাড়া থেকে আটক করা হয়েছে। নিহত মিন্টু তরফদারের ব্যবহৃত দুইটি মোবাইল ফোনও উদ্ধার করে পিবিআই।
আটককৃতরা হলেন, নড়াইল জেলার রুখালী গ্রামের ইন্তাজ বিশ্বাসের ছেলে বর্তমানে অভয়নগরের বাশুয়াড়ী নানা বাড়ির বাসিন্দা রায়হান ও সাতক্ষীরা জেলার কাউনডাঙ্গা গ্রামের মফিজুল ইসলামের ছেলে আশিকুর রহমান। আটকের পর সোমবার তাদেরকে আদালতে সোপর্দ করা হলে তারা হত্যার সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার দালাল আসামিদের জবানবন্দি গ্রহণ শেষে দুই আসামীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। নিহত মিন্টু তরফদার উপজেলার বেঙ্গল টেক্সটাইল মিল এলাকার মৃত মুসা তরফদারের ছেলে।
পিবিআই ও আদালত সূত্র জানায়, আটক রায়হান বিশ্বাস ও আশিকুর রহমান চাকরির জন্য ১৯ আগস্ট অভয়নগরের ‘সরদার এন্টারপ্রাইজ’ কয়লার ডিপোতে যায়। এর আগে রায়হান বিশ্বাস ও আশিকুর খুলনার ফুলতলা বেজের ডাঙ্গায় আইয়ান জুট মিলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতো।
সেখানে মোবাইল চুরির ঘটনা নিয়ে স্থানীয় বখাটেদের সাথে বিরোধ হলে চাকরি ছেড়ে চলে আসে। কিন্তু তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় ‘সরদার এন্টারপ্রাইজ’ কর্তৃপক্ষ চাকরি দেয়নি। তারা ফিরে আসার পথে নৈশ প্রহরী মিন্টু তরফদারের হাতে দুইটি মোবাইল ফোন দেখতে পায়। এর আগে অভয়নগরের তালতলা এলাকার সরকার ট্রেডার্সের সামনে ঘোরাঘুরির সময় ওই দুইজনকে নিরাপত্তা কর্মী মিন্টু তরফদার কান ধরে উঠবস করায়। এতে তাদের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। আসামিরা মিন্টুর ফোন দুইটি চুরি ও তাদের অপমানের প্রতিশোধ নেয়ার পরিকল্পনা করে। রাতে তারা অফিস কক্ষে থাকার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু নৈশ প্রহরী মিন্টু রাজি না হওয়ায় আকুতি মিনতি করে আসামিরা। এক পর্যায় রাজী হয় মিন্টু। রাত নয়টার পর গল্পের ছলে তারা মিন্টু তরফদারের গলায় গামছা পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে মোবাইল দুইটি নিয়ে দুজনে পালিয়ে যায়। আাসামিরা জানায়, পরের দিন তারা মিন্টুর একটি মোবাইল ফোন খুলনা সোনাডাঙ্গা নিউ মার্কেট বাইতুন নুর জামে মসজিদ মার্কেটের একটি দোকান কর্মচারী আব্দুল্লাহ সানাম খানের কাছে বিক্রি করেন। খুলনার মোবাইলের ওই দোকান কর্মচারি রায়হান ও আশিকুরের নাম ঠিকানা এবং দুজনের ছবি তুলে রাখে। অপরটি গাংনী থানার আতাউল সুপার মার্কেটের সালাম মোবাইল সার্ভিসিং সেন্টারের মালিক আব্দুস সালামের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। মেহেরপুর জেলার গাংনী থানাধীন আসামী রায়হানের খালার বাড়ী কাজিপুর নিমস্মরণ পাড়ায় যেয়ে বিক্রি করে।
এদিকে, শনিবার (২০ আগস্ট) সরকার গ্রুপের ঘাটের অফিসের ভেতর থেকে মিন্টুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী জুলেখা বেগম অজ্ঞাত আসামি করে অভয়নগর থানায় মামলা করেন। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই। পুলিশ সুপার রেশমা শারমিনে নির্দেশে পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) দেবাশীষ মন্ডল, এসআই স্নেহাশিস দাশ, এসআই ডিএম নূর জামাল, এসআই মিজানুর রহমান-১ এর সমন্বয়ে একটি টিম খুলনায় অভিযান চালিয়ে মোবাইল ফোন উদ্ধার করে। পরে সেখান থেকে তথ্য নিয়ে পুলিশ পরিদর্শক শামীম মুসা, এসআই রেজোয়ান, এসআই গোলাম আলীর সমন্বয়ের আরেকটি টিম মেহেরপুর জেলার গাংনী থানার কাজীপুর নিমস্মরণ পাড়ায় আসামি রায়হানের খালার বাড়ি অভিযান চালিয়ে আসামিদের আটক ও গাংনী থানার আতাউল সুপার মার্কেটে থেকে আর একটি মোবাইল উদ্ধার করে।
এলাকাবাসী ও নিহতের পরিবার আসামী দের দৃষ্টান্তমূলক শ্বাস্তি দাবী করেন।
মন্তব্য