শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪
 

পুরান ঢাকায় র‍্যাবের অভিযান, ঘিরে রাখা বাড়ি থেকে আটক ৬

কণ্ঠস্বর ডেস্ক, ঢাকা
প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২২

দৈনিক যুগের কণ্ঠস্বর

রাজধানীর পুরান ঢাকার নারিন্দা এলাকায় ঘিরে রাখা সেই বাড়িটিতে অভিযান চালিয়ে ছয়জনকে আটক করেছে র‍্যাপিড আ্যকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) দিবাগত রাত পৌঁনে ১টায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ তথ্য জানান র‍্যাব সদর দফতরের আইন ও গণমাধ্যম শাখা পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

গোপন সংবাদের ভিক্তিতে মঙ্গলবার সাড়ে ১০টা থেকে নারিন্দার ফকিরচান সর্দার কমিউনিটি সেন্টার সংলগ্ন একটি বাড়ি ঘিরে অভিযান শুরু করে র‌্যাব।

অভিযান শেষে রাত পৌঁনে ১টায় সংবাদ সম্মেলন করেন খন্দকার আল মঈন।

খন্দকার আল মঈন বলেন, বাড়িটিতে বিপুল পরিমাণ মাদকদব্য আছে এমন খবরের ভিত্তিতে র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে বাড়িটিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় সেখান থেকে ছয়জনকে আটক করা হয়।

তিনি বলেন, সম্প্রতি কিছু অভিভাবক র‌্যাব-২ এর অফিসে আসেন এবং আমাদের জানান, তাদের সন্তানরা কামরাঙ্গীর চরের একটি দোকান থেকে আয়ুর্বেদিক ওষুধের মতো কিছু একটা কিনে পান করছে যার পরবর্তীতে তারা মাদকসেবীদের মতো আচরণ করছে। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা কামরাঙ্গীর চরে কথিত ওই আয়ুর্বেদিকের দোকানে যাই এবং ক্রেতা সেজে কয়েক বোতল ওষুধ জোগাড় করি। পরে সেটি পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরিতে পাঠাই। পরীক্ষার পর রির্পোট আসে যে, সেটি আসলে মাদক মিশ্রিত পানীয়।

‘এই পানীয়ের মধ্যে গাঁজা, ইয়াবা, ডান্ডি তৈরিতে ব্যবহৃত টলুইন নামক নামক ‘ক’ শ্রেণির মাদকের উপস্থিতি পাওয়া যায়। এছাড়া তীব্র ঘুমের ওষুধ ও যৌন উত্তেজনা বৃদ্ধির বিভিন্ন উপকরণ, এসিড জাতীয় দ্রব্যাদিসহ বিভিন্ন দাহ্য পদার্থের উপস্থিতি পাওয়া যায়, যা পান করলে কিডনি রোগসহ নানা রকম জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। পরবর্তীতে আমরা কামরাঙ্গীরচরের সেই দোকানে অভিযান চালাই এবং কয়েকজনকে আটক করি। আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের পর আমরা এই জায়গার খোঁজ জানতে পারি। পরে আমরা এই বাড়িটিতে অভিযান চালাই,’ যোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, এখানে প্রায় সাড়ে তিন হাজার বোতল পেয়েছি যার মধ্যে এই মাদক মিশ্রিত পানি রয়েছে। এছাড়া ইয়াবার মিক্সার, গাঁজার মিক্সার, টলুইন আমরা পেয়েছি। এটি মূলত এই মাদক মিশ্রিত পানীয় উৎপাদনের কারখানা ছিল। অভিযান পরিচালনা করে আমরা জানতে পারি এটা মূলত হেকিম মো. নাঈম নামে বাজারজাত করে আসছিল। যিনি নিজেকে বড় একজন হেকিম হিসেবে দাবি করে আসছিল। তাকে আমরা আটক করতে পারিনি। তবে শান্ত নামে তার ছেলে আমরা আটক করতে সক্ষম হয়েছি। শান্ত এই মাদক মিশ্রিত পানীয় তৈরির ফ্যাক্টরি দেখাশোনা করছিলেন। পাশাপাশি মাদক মিশ্রিত এই পানীয় বিক্রির জন্য ব্যবহৃত কয়েকটি আরও ৫ জনকে আটক করেছি।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা যায় যে তারা ফার্মেসির নামে লাইসেন্স নিয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে আয়ুর্বেদিক ওষুধ বিক্রির আড়ালে মাদক ও যৌন উত্তেজক দ্রব্যাদি মিশ্রিত পানীয় প্রস্তুত ও বিক্রি করে আসছিলেন। আমরা জানতে পেরেছি, মাদক মিশ্রিত এই পানীয়ের প্রতিটি বোতল ১৬০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হতো। বড় বোতলগুলো বিক্রি হতো ২০০ টাকায়। গত দুই-তিন বছর ধরে তারা ঢাকার কয়েকটি আউটলেটের মাধ্যমে এসব বিক্রি করে আসছিল। সবগুলো আউটলেটে তার ফার্মেসির লাইসেন্সও ছিল।

‘নারিন্দার এই কারখানায় এসব পানীয় উৎপাদন করে কামরাঙ্গীরচর, কাটাবন, নাজিরা বাজার, গুলিস্তানসহ বিভিন্ন জায়গায় আউটলেটের মাধ্যমে পানীয়টি বিক্রি করে থাকে এ প্রতারক চক্রটি। রাজধানীর বিভিন্ন আউটলেট থেকে প্রতিদিন তিন-চারশ’ বোতল মাদক মিশ্রিত পানীয় বিক্রি হতো বলে জানান আটক ব্যক্তিরা,’ যোগ করেন এ কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা গেছে, তারা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে কারখানার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন। বিভিন্ন সময়ে বাসা পরিবর্তনের মাধ্যমে অবস্থান পরিবর্তন করত চক্রটি। কম দামে নেশা জাতীয় দ্রব্যাদির উপস্থিতি থাকায় তরুণ সমাজের মধ্যে পানীয়টির চাহিদা বৃদ্ধি পায়। তাই তারা এগুলো তৈরি ও বিক্রি করে আসছিলেন।

আটক ব্যক্তিদের ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

রিপোর্ট- মো: জাহাঙ্গীর আলম পলক

মন্তব্য

সর্বশেষপঠিত

এলাকার খবর

Developed By: Dotsilicon