গ্রীষ্মের তপ্ত দুপুরে, শরীর যখন ক্লান্ত প্রচণ্ড গরমে , তখন এক গ্লাস ডাবের পানি এনে দিতে পারে খুব দ্রুত প্রশান্তি। এটি সম্পূর্ণরূপে একটি প্রাকৃতিক পানীয়। এতে নেই কোনো প্রিজারভেটিভ, কৃত্রিম রং ও ফ্লেভার। তাই বাজারে যত কৃত্রিম পানীয় আছে, তার তুলনায় অনন্য এই ডাবের পানি। সাধারণত মাটির গুণাগুণের ওপর ভিত্তি করে ডাবের পানির স্বাদে পার্থক্য হয়ে থাকে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ডাবের পানি যেমন বেশ মিষ্টি হয়, তেমনি বাংলাদেশের ডাবের পানি বেশ মিষ্টি ও হালকা নোনতা স্বাদের হয়ে থাকে। আবার কোনো কোনো দেশের ডাবের পানি পানসে হয়।
ডাবের পানি অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ও জনপ্রিয় একটি পানীয়। এতে রয়েছে দেহের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন প্রাকৃতিক এনজাইম ও খনিজ উপাদান। ১০০ মিলি ডাবের পানিতে থাকে ১৮ ক্যালরি, ৪ মিলিগ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১০৫ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ২০৫ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম, ২.৬ মিলিগ্রাম সুগার, ২.৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ২৪ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ০.৩ মিলিগ্রাম আয়রন ও ২৫ মিলিগ্রাম ম্যাগনেশিয়াম।
তীব্র গরম থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য অনেকেই নানা রকম পানীয় পান করে থাকে। কিন্তু বাজারে বিক্রিকৃত এসব পানীয় শরীরের কতখানি উপকার করে বা অপকার করে সেই ব্যাপারে আমাদের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে।
কোমল পানীয়তে থাকে ক্যাফেইন, সুগার, অ্যালুমিনিয়াম, ফসফরিক এসিড ও কার্বন ডাই অক্সাইড ইত্যাদি। এগুলো মূলত দেহের উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি করে থাকে।
এমন পরিস্থিতিতে নির্ভর করা যেতে পারে ডাবের পানির উপর। এটি অত্যন্ত উপকারী একটি প্রাকৃতিক পানীয়। চলুন জেনে নেয়া যাক ডাবের পানির স্বাস্থ্য উপকারিতা-
* ডাবের পানিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম ক্লোরাইড ও শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য পুষ্টি। এতে পটাশিয়াম আছে প্রচুর পরিমাণে। বমি হলে মানুষের রক্তে পটাশিয়ামের পরিমাণ কমে যায়। ডাবের পানি পূরণ করে এই ঘাটতি। তাই অতিরিক্ত গরম, ডায়রিয়া, বমির জন্য উৎকৃষ্ট পানীয় ডাবের পানি।
* এতে পানির পরিমাণ প্রায় ৯৪ শতাংশ। তাই ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষায়, পুরো দেহের শিরা-উপশিরায় সঠিকভাবে রক্ত চলতে সাহায্য করে। কারণ, পানি বেশি পান করলে কিডনির কাজ করতে সুবিধা হয়, দেহে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের সরবরাহ বাড়ে, ত্বকসহ প্রতিটি অঙ্গে পৌঁছায় বিশুদ্ধ রক্ত। ফলে পুরো দেহ হয়ে ওঠে সতেজ ও শক্তিশালী।
* ডাবের পানি হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ফলে এটি মেদ কমাতে সাহায্য করে। তাই ওজন কমানোর জন্য ডাবের পানি একটি উপকারী পানীয়।
* ডাবের পানি বাচ্চাদের গ্রোথ বাড়াতেও সাহায্য করে থাকে।
* কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ডাবের পানি কিডনিতে পাথর প্রতিরোধে সাহায্য করে।
*গরমে ডি-হাইড্রেশনের সমস্যায় ডাবের পানি বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।
*অন্যান্য ফলের রসের তুলনায় ডাবের পানিতে কম ক্যালরি ও কম সুগার থাকে। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য যাঁরা ডায়েট করছেন, তাঁরা ডাবের পানি খেতে পারবেন।
*ডাবের পানিতে অ্যান্টিভাইরাল ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল কার্যকারিতা থাকায় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করেডাবের পানিতে অ্যান্টিভাইরাল ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল কার্যকারিতা থাকায় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
*ডাবের পানিতে অ্যান্টিভাইরাল ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল কার্যকারিতা থাকায় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
তবে ডায়াবেটিসের রোগীরা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রেখে ডাবের পানি খাবেন। কিডনিতে পাথর হয়েছে বা ডায়ালাইসিস চলছে, এ ধরনের রোগীরা এই ফল খাবেন না। কারণ, এতে রয়েছে উচ্চমাত্রার পটাশিয়াম, যা কিডনি রোগীদের জন্য ক্ষতিকর।
কিন্তু যারা সুস্থ মানুষ, তাদের কিডনির জন্য ডাবের পানি আশীর্বাদস্বরূপ। কিডনি দেহের ছাঁকন যন্ত্র। এই অঙ্গ শরীরের নোংরা ও ক্ষতিকর অংশগুলোকে দেহের বাইরে বের করতে সাহায্য করে। এই ফলে নেই কোনো ভিটামিন এ। তার পরও শরীরের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চমাত্রার ক্যালসিয়াম রয়েছে ডাবের পানিতে, যা হাড়কে করে মজবুত। সেই সঙ্গে জোগায় ত্বক, চুল, নখ ও দাঁতের পুষ্টি।
একই সাথে এই গরমে পরিমাণমতো বিশুদ্ধ পানি পান করুন। আর যতটা সম্ভব রোদ এড়িয়ে চলুন।
লেখক : কৃষিবিদ অর্ঘ্য চন্দ,
স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী, উদ্যানতত্ত্ব বিভাগ,
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
মন্তব্য