জাতীয় নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে রাজনীতির মাঠ ততই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও তার মিত্রদের দাবিটি দীর্ঘদিনের। দাবিটি অমীমাংসিত থাকলেও এরই মধ্যে দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই ইস্যুটি মীমাংসিত না হওয়ায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন সরকারবিরোধী আন্দোলন ধীরে ধীরে চাঙ্গা হতে শুরু করেছে। রাজপথ দখলের ঘোষণা দিয়ে সুযোগ পেলেই বিভিন্ন ইস্যুতে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে বিএনপি। ইতোমধ্যে বিএনপির কর্মসূচি ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা, সংঘর্ষ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। তবে বিএনপি ও তার মিত্রদের আন্দোলন এ মুহূর্তে কোনোভাবেই রাজপথে চাঙ্গা হতে দেবে না ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। সরকাবিরোধী আন্দোলন কঠোরভাবে দমন করার চিন্তা রয়েছে শাসক দলের।
বিএনপির আন্দোলন প্রসঙ্গে গতকাল সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আন্দোলনের নামে সহিংসতার উপাদান যুক্ত হলে আওয়ামী লীগ জনগণকে সাথে নিয়ে তা মোকাবেলা করবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কখনো গায়ে পড়ে কাউকে আক্রমণ করবে না তবে আক্রান্ত হলে পাল্টা আক্রমণ করা হবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, বিএনপি আন্দোলন করবে এটা নতুন কোনো কথা নয়, দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছে। তাদের আন্দোলন যদি শান্তিপূর্ণ হয় তাহলে সরকার বাধা দেবে না। কিন্তু আন্দোলনের নামে বিএনপি বিভিন্ন জায়গায় সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করছে, এটা কোনো অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয়। তারা দেশে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে। তিনি বলেন, মানুষের জানমাল রক্ষা করা ও নিরাপত্তা দেয়া সরকারের দায়িত্ব। আন্দোলনের নামে কোনো ধরনের সহিংসতা চালালে, নৈরাজ্য সৃষ্টি করলে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালালে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তা কঠোরভাবে দমন করবে। জনগণের জানমাল রক্ষায় আওয়ামী লীগও সাংগঠনিকভাবে মাঠে থাকবে।
দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপিকে সরকারবিরোধী আন্দোলন করে রাজনীতির মাঠ দখলের সুযোগ দেবে না আওয়ামী লীগ। সরকারবিরোধী রাজপথের যেকোনো কর্মসূচি প্রতিহত করতে একদিকে কঠোর অবস্থানে থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবেও আওয়ামী লীগ কঠোর অবস্থান নেবে। শোকের মাস আগস্টের কারণে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আগে নমনীয়তা দেখানো হয়েছে। তবে এ মাস সেপ্টেম্বর থেকে তারা মাঠে থাকবে এবং আন্দোলনের নামে কেউ সহিংসতা তৈরির চেষ্টা করলে তা কঠোরভাবে মোকাবেলা করা হবে। ইতোমধ্যে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, আওযামী যুবলীগ বিএনপির আন্দোলন প্রতিহত করতে রাজপথে সক্রিয় অবস্থান করছেন। গতকালও রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে যুবলীগ।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরেই বিএনপি সরকারবিরোধী আন্দোলনের কথা বলে আসছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো আন্দোলন দাঁড় করাতে পারেনি। এমনকি তাদের নেত্রীর মুক্তি আন্দোলনে বড় ধরনের কোনো মিছিল বা সভা সমাবেশ করে দেখাতে পারেনি। তবে বিশ্বব্যাপী চলমান অর্থনৈতিক সঙ্কটের সুযোগ নিয়ে নির্বাচনের আগে বাংলাদেশেও একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। সেই সুযোগে রাজপথ দখলের নামে বিএনপি অতীতের মতো একটা বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে পারে- এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না।
এ বিষয়ে সরকার ও দলের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে তৃণমূলপর্যায়েও সেভাবেই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অবশ্য আন্দোলনের নামে কেউ বা কোনো দল যদি সহিংসতা করে তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেখবে। পাশাপাশি বাড়তি সতর্কতা হিসেবে নেতাকর্মীরা সতর্ক অবস্থান নিয়ে তাদের এলাকায় অবস্থান করবেন। ইতোমধ্যে বিএনপি রাজপথ দখলের ঘোষণা দেয়ার পরই রাজধানীতে বড় ধরনের সমাবেশ করে শক্তি প্রদর্শন করা হয়েছে। এরই মাধ্যমে বিএনপিকে একটি বার্তা দেয়া হয়েছে তাহলো- আওয়ামী লীগ রাজপথ ছাড়ে নাই। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় আওয়ামী লীগ মাঠে থাকবে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের অন্যতম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বিএনপি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করলে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। কিন্তু আন্দোলনের নামে সহিংসতা করলে, সাধারণ মানুষের শান্তি বিনষ্ট করলে তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেখবে। তিনি আরো বলেন, দেশ ও দেশের জনগণের স্বার্থে এগুলো প্রতিহত করা সরকারি দল হিসেবে আমাদেরও দায়িত্ব। আওয়ামী লীগ সেই দায়িত্ব পালন করবে। বিএনপি আন্দোলনের নামে অতীতের মতো পেট্রলবোমা মেরে ও অগ্নিসন্ত্রাস করে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইলে তাদের সে সুযোগ দেয়া হবে না। কারণ রাজপথ কাউকে ইজারা দেয়া হয়নি। তারা যেখানেই আগুন সন্ত্রাস চালাবে, নৈরাজ্য কর্মকাণ্ড সৃষ্টি করবে সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন বলেন, বিএনপি একটি রাজনৈতিক দল। তাদের সভা সমাবেশ করার অধিকার আছে। তারা যদি শান্তিপূর্ণভাবে তাদের কর্মসূচি পালন করে তাহলে বাধা দেয়া হবে না। কিন্তু আন্দোলনের নামে অতীতের মতো জ্বালাও-পোড়াও অগ্নিসন্ত্রাস করে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে মানুষ হত্যা করে তাহলে সেই সুযোগ দেয়া হবে না।
তিনি বলেন, রাজপথ কাউকে ইজারা দেয়া হয়নি। বিএনপি রাজপথে নেমে সন্ত্রাসী ও নৈরাজ্য কর্মকাণ্ড করলে সরকারের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আছে তাদের দমন করবে। আর আমরা দলের পক্ষ থেকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করব। রাজপথে থেকে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জবাব দেয়া হবে।
মন্তব্য