সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫
 

নারী নির্যাতনের মামলায় পলাতক বিভাগীয় প্রধান সাইফুল ইসলাম

মাহবুবুর রহমান জিসান
প্রকাশ: ৩ সেপ্টেম্বর ২০২২

---
জাতীয় কবি কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের প্রধান সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে একাধিকবার শিক্ষার্থীদের করা অভিযোগে তদন্ত কমিটি হলেও অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে এখন পর্যন্ত কোন তদন্তই আলোর মুখ দেখেনি। এবার সাইফুল ইসলামের দ্বিতীয় স্ত্রী অভিযোগ করেছে ময়মনসিংহ কোতোয়ালী মডেল থানায়। দ্বিতীয় স্ত্রী আনন্দমোহন কলেজের শিক্ষিকা মোছাঃ সোহেলী আক্তার লিখিত অভিযোগে বলেন, তাকে রংপুরের জমি বিক্রি করে দেয়ার প্রস্তাব দেয় সাইফুল ইসলাম এবং তা না মানায় তার উপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালায়।

এছাড়া সে অন্য নারীতে আশক্তি হয়ে গভীর রাতে ভিডিও চ্যাটিং এ ব্যস্ত থাকতো যার প্রতিবাদ করাতেও তার উপর নির্যাতন করতো। সাংসারিক কলোহের জের ধরে গেলো ১৪ আগস্ট তার ২য় স্ত্রীকে শারীরিক নির্যাতন করলে তার পরদিন সেই স্ত্রী তার বাবার বাড়ী চলে যায় এবং চিকিৎসা গহণ করে একই মাসের আগস্টের ২৪ তারিখ ময়মনসিংহের বাসায় এসে ঘরে প্রবেশ করতে না পেরে থানা পুলিশের কাছে গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ময়মনসিংহ কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ কামাল আকন্দ । তিনি বলেন, আমরা আন্দন্দমোহন কলেজের এক শিক্ষিকার নারী নির্যাতন ও যৌতুক নিয়ে করা মামলা নিয়ে কাজ করছি। আসামী তার স্বামী সাইফুল ইসলামকে পুলিশ হেফাজতে আনতে চেষ্টা প্রক্রিয়া চলমান। পালিয়ে যাওয়ার পরও তার অবস্থান আমরা শনাক্ত করেতে পেরেছি দ্রুতই তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা যাবে।

তার আগে সাইফুল ইসলাম দুই সন্তানের মা হওয়া প্রথম স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়েছে। অল্প সময়ের ব্যবধ্যানে আবার বিয়ে করেছে বর্তমান(২য়) স্ত্রী একসময়ের সহপাঠিকে। এবার সেই সহপাঠির সঙ্গে ২৬ মাস সংসার করার পর যৌতুক ও নারী নির্যাতনের মামলার আসামী হয়ে পলাতক রয়েছেন । নম্বর জালিয়াতির অভিযোগের পর এবার স্ত্রীর করা নারী নির্যাতনের মামলায় আলোচনায় ফোকলোর বিভাগীয় প্রধান ড. মোঃ সাইফুল ইসলাম। আগস্টের শেষ সপ্তাহে করা মামলার পর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছেও বিচার চেয়ে আবেদন করেছেন সাইফুল ইসলামের ২য় স্ত্রী মোছাঃ সোহেলী আক্তার। প্রসঙ্গত ২০২০ সালের শুরুতেই দুই সন্তানের ভরণ পোষণ বহনের শর্তে ডিভোর্স হয় প্রথম স্ত্রী স্মৃতি রাণী ভৌমিকের সঙ্গে মোঃ সাইফুল ইসলামের। অভিযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক নারী শিক্ষার্থীর সঙ্গেও গোপন সম্পর্কে জরিয়ে ছিলেন এই শিক্ষক। তার নিজের স্ত্রী মোছাঃ সোহেলী আক্তার বলেন, সে একাধিক নারীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছে। আমি এগুলো নিয়ে বিরক্ত।

ফোকলোর বিভাগের অন্য এক শিক্ষকের সহযোগিতায় সাইফুল নারীদের সঙ্গে ঘনিষ্ট হয়ে প্রতারণা করে। হাসপাতালে এক নারী শিক্ষার্থী ভর্তি হলে সারারাত সাইফুলকে নিয়ে সেই শিক্ষক হাসপাতালে কাটায়। এছাড়াও একাধিক নারীর সঙ্গেও আমি অনৈতিক সম্পর্কের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছি। আরকেউ যেনো এর প্রতারণায় না পরে। সে জন্য আমি সবাই কে সচেতন থাকতে অনুরোধ করছি। এর আগে চলতি বছরের জুলাই মাসে তার বিরুদ্ধে নম্বর টেম্পারিং এর অভিযোগা আনে স্নাতকোত্তর ২০১৮-১৯ শ্রেনীর শিক্ষার্থীরা। এছাড়া ২০২০ সালের জুন মাসে এক শিক্ষার্থী নির্যাতনের অভিযোগও উঠেছিলো এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে একাধিকবার তদন্ত কমিটি হলেও তদন্ত প্রতিবেদন কিংবা দৃশ্যমাণ অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়নি।

মামলার অভিযুক্ত এবং কর্মকান্ডের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য সৌমিত্র শেখর বলেন, আমরা তার বিরুদ্ধে করা মামলার কোন নথি এখনো হাতে পাইনি। এছাড়া যদি আমাদের শিক্ষক যিনি তিনি যদি গ্রেফতার হোন কিংবা অপরাধী হোন আমরা তা জানা মাত্রই বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করবো। গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত আমরা তাকে কিছু করতে পারি না। তবে কোন অভিযোগ প্রমাণিত হলে এবং নৈতিক স্কলনের বিষয় প্রমাণিত হলে বিশ্ববিদ্যালয় কঠোর হয়ে আইনের বাস্তবায়ন করবে। বহিষ্কার তখনই হবে যখন আইনের কাছে প্রমাণ হবে। গ্রেফতার হলেই তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হবে এবং পূর্ণাঙ্গ রায়ের পর বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা। এদিকে ছুটি মঞ্জুর হওয়ার আগেই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মেহেদি উল্লাহকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বপালন করবে এমন চিঠি দিয়েই পলাতক রইয়েছেন ড. সাইফুল ইসলাম। তবে দায়িত্ব প্রাপ্তির কথা জানেন না বলে মন্তব্য করেছেন বিভাগটির সহকারী অধ্যাপক মেহেদি উল্লাহ। তবে মেহেদি উল্লাহকে বিভাগীয় প্রধান করে গেছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিভাগটির আরেক শিক্ষক সাবেক বিভাগীয় প্রধান মোঃ বাকীবিল্লাহ । তবে এখনো কোন ছুটির চিঠি পাননি বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবীর।

তবে ফোকলোর বিভাগের কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম রানা বলেন, মেহেদি স্যারকে ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান করে ১৫ দিনের জন্যে ছুটিতে যাবার আবেদন সাইফুল স্যার বিভাগে রেখে গিয়েছিলেন যা আমি রেজিস্ট্রার বিল্ডীং এ জমা দিয়েছে। আর মেহেদি স্যারও জানে তাকে বিভাগীয় প্রধান করার কথা। এছাড়া শ্রেনীকক্ষে সরকার ও সরকার প্রধান নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেও আলোচনায় এসেছিলেন এই শিক্ষক। ফোকলোর বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থী নাম্বার টেম্পারিংয়ের বিষয় সহ নারী নির্যাতনের বিচার দাবী করেন। এছাড়া কেউ যেনো তাদের নোংরামির কবলে না পরে এজন্য সকল কে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্র শিক্ষক।

মন্তব্য

সর্বশেষপঠিত

এলাকার খবর

Developed By: Dotsilicon