সেবার আওতা এবং শাস্তি বাড়িয়ে ভোক্তা আইন সংশোধন করা হচ্ছে। বিদ্যমান আইনে পণ্যে ভেজাল দেয়া ও বিক্রিতে কারসাজিতে শুধু বিক্রেতাকেই শান্তি দেওয়া হয়। সংশোধিত ভোক্তা আইনে উৎপাদনকারী ও আমদানিকারককেও শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে ভোক্তা অধিকার আইন-২০০৯ সংশোধনের সব কার্যক্রম শেষ। এখন সংসদে পাশ হলে তা ভোক্তা
অধিকার আইন-২০১৮ নামে অভিহিত হবে। আইন অনুযায়ী বাড়িভাড়া, পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পাসপোর্ট, কুরিয়ার সার্ভিস, শিক্ষা (কোচিং), হজ রিক্রুটিং এজেন্সি, লাইসেন্স, বিউটি পার্লার, সেলুন, পরিবহণ, টেলিযোগাযোগ, আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁ, স্বাস্থ্যসেবা, ভূমি, রিয়েল এস্টেট, ট্রাভেল এজেন্সি, কর্মসংস্থান (বৈদেশিকসহ), বিনোদন কেন্দ্র, লন্ড্রি, ইন্টারনেট, কেবল অপারেটর, মোবাইল ব্যাংকিংসহ যে কোনো ধরনের সেবা ক্ষুণ্ন হলে ভোক্তা মামলা করতে পারবে। আর দোষ প্রমাণিত হলে আইনের ৪৫, ৫২ ও ৫৩ ধারায় শাস্তি দেয়া যাবে। সেক্ষেত্রে
৪৫ ধারায় এক বছরের কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। আর ৫২ ও ৫৩ ধারায় ৩ বছরের কারাদণ্ড বা ৩ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড দেয়া হবে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। শ্লিষ্ট সূত্র মতে, সংশোধিত ভোক্তা আইনে দেশে উৎপাদিত বা আমদানি মোড়কজাত পণ্যে উৎপাদনের তারিখ, মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ, মডেল বা ব্যাচ নম্বর, উৎপাদনকারী বা আমদানিকারকের নাম-ঠিকানা না দেয়া হলে এক বছরের কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। আর স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে উপাদান সংরক্ষণ না করে পণ্য উৎপাদন, সরবরাহ ও বিক্রি করলে ২ বছর কারাদণড বা ৩ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেয়া যাবে। তাছাড়া উভয় দণ্ডে
দণ্ডিত করার বিধানও রাখা হয়েছে। মোড়কে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে পণ্য বা সেবা বিক্রি করলে অপরাধ বলে গণ্য করা হবে। ভেজাল মিশ্রিত পণ্য বিক্রির উদ্দেশ্যে উৎপাদন, আমদানি বা মজুত অথবা সরবরাহ করা হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দোষ প্রমাণিত হলে ৩ বছরের কারাদণ্ড বা ৩ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। মেয়াদ উত্তীর্ণ কোনো পণ্য বিক্রি করলে এক বছরের কারাদণ্ড বা ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড দেয়া যাবে।
সূত্র জানায়, চলমান আইনে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর অভিযোগ করা গেলেও সংশোধিত আইনে ভোক্তা অধিকার রক্ষায় আদালতে যেতে পারবে। বাড়িভাড়া, পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পাসপোর্ট, কুরিয়ার সার্ভিস, শিক্ষা (কোচিং), হজ রিক্রুটিং এজেন্সি, লাইসেন্সসহ একাধিক সেবায় অধিকার ক্ষুণ্ন হলে মামলা করা যাবে। পাশাপাশি অভিযুক্ত আপিল করতে পারবে। অধিকার ক্ষুণ্ন হলে সংশোধিত আইনে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বা অধিদপ্তরের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করতে পারবে। তাছাড়া জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছেও লিখিত অভিযোগ করা যাবে। পণ্য বা সেবা কিনে প্রতারিত হলে ভোক্তা উৎপাদনকারী, সরবরাহকারী, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাকে অভিযুক্ত করতে পারবে।
ক্রেতাকে রসিদ বাধ্যতামূলকভাবে দিতে হবে। নতুন আইনে ভোক্তা কোনো পণ্য বা সেবা ক্রয় করে প্রতারিতের কারণ উদ্ঘাটন হওয়ার ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে অভিযোগ করতে পারবেন।
সূত্র আরো জানায়, নতুন আইনে প্রশাসনিক আদেশের বিরুদ্ধে দোষী ব্যক্তির আপিলের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের আদেশপ্রাপ্তির ৭ কার্যদিবসের মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর আপিল করতে হবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশের বিরুদ্ধে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে আপিল করা যাবে। তাছাড়া পণ্য বা সেবা প্রদানকারীর অবহেলা, দায়িত্বহীনতা বা অসতর্কতায় সেবাগ্রহীতার ক্ষতি হলে ভোক্তা অধিকার অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হবে।
এদিকে এ বিষয়ে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান জানান, বর্তমান ভোক্তা আইনে অনেক ফাঁকফোকর আছে। তাতে ভোক্তার অধিকার রক্ষা হয় না। তাছাড়া দোষ না করেও অনেক ব্যবসায়ীকে জরিমানা গুনতে হয়। এবার তারা পরিত্রাণ পাবে। ন্যদিকে এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এএইচএম সফিকুজ্জামান জানান, ভোক্তাদের আরো বেশি সুফলের জন্য আইনে বেশকিছু ধারা পরিবর্তন ও সংযোজন করা হয়েছে। শাস্তিও আরো বাড়ানো হয়েছে। ভোক্তা অধিকার আইনের খসড়া চূড়ান্ত করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। আইনের বিষয়ে ভেটিংয়েও শেষ হয়েছে। জাতীয় সংসদে ভোক্তা আইন পাশ হলে তা আইনে পরিণত হবে।
মন্তব্য