কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও কাজী নজরুল ইসলাম হল ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে পুর্ব ঘটনার জের ধরে ফের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন উভয় হলের অন্তত ১৫ নেতাকর্মী।
শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক সংলগ্ন স্থানে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী। এর আগে শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে দুই হলের মধ্যবর্তী স্থানে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। ওই সময় ১৫ জন আহত হন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, একে-অপরকে লক্ষ্য করে দুই হলের নেতা-কর্মীরা হলের মধ্যবর্তী রাস্তায় বাঁশ, হলের সামনে থাকা গাছের ডাল, রড নিয়ে একে অপরের দিকে তেড়ে যায়। ক্যাম্পাসের ফটকের দু প্রান্ত থেকে বাঁশ, গাছের ডাল, রড ও ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। প্রায় দেড় ঘন্টা যাবৎ এই ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে। খবর পেয়ে পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।
ঘটনা প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট ড. মোকাদ্দেস-উল-ইসলাম, শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট সাহেদুর রহমান, অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাসির হোসেইন উপস্থিত হয়ে প্রথমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের শিক্ষার্থীদের ভেতরে নিয়ে হলের মূল ফটক আটকে দেন। এরপর কাজী নজরুল ইসলাম হলের শিক্ষার্থীদের হলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, দুই হলের শিক্ষার্থীদের দুই দিকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। দুই পক্ষকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছি আমরা।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, শনিবার দুপুরে নজরুল হল ছাত্রলীগের এক কর্মীকে মারধর করে বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এর জের ধরেই আবার সংঘর্ষের শুরু হয়। পরে প্রক্টরিয়াল বডি ও পুলিশ পরিস্থিতি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায়। এসময় নজরুল হলের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে।
এর আগে শুক্রবার (৯ আগস্ট) দুপুরে জুমার নামাজে যাওয়ার পথে ‘সাইড’ চাওয়াকে কেন্দ্র করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও কাজী নজরুল ইসলাম হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতি হয়।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, কাজী নজরুল ইসলাম হলের শিক্ষার্থী ও ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের আশরাফুল রায়হান নামাজে যাচ্ছিলেন। এ সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল গেটের সামনে লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের একই হলের শিক্ষার্থী সেলিম আহমেদকে ‘সাইড’ দেওয়ার কথা বলেন। তখন সেলিম আহমেদের কাঁধে ধাক্কা লাগে। নামাজ শেষে সেলিম ও রায়হানের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। সেলিম, তার বন্ধু মাহবুব ও রায়হান একে-অপরের দিকে তেড়ে যান। এ নিয়ে দুই হলের শিক্ষার্থীদের বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। তখন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীসহ দুই হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
এর জের ধরে একই দিন সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চের সামনে কাজী নজরুল ইসলাম হলের ছাত্রলীগ কর্মী ফাহিম আবরারের ওপর হামলা চালান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ছাত্রলীগ কর্মী ও বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আকরাম হোসেন, সালাউদ্দিন আহমেদসহ কয়েকজন। রাত ১২টার দিকে বঙ্গবন্ধু হল সংলগ্ন একটি দোকানে কাজী নজরুল ইসলাম হলের প্রায় সাত-আট জন ছাত্রলীগ কর্মী গিয়ে বঙ্গবন্ধু হলের এক ছাত্রলীগ কর্মীকে মারধর করেন। এরপর খবর পেয়ে এক পর্যায়ে দুই হলের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। । এতে ১৫ জন আহত হন।
বিকেলের দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট ড. মোকাদ্দেস-উল-ইসলাম বলেন, ঘটনার সাথে সাথে আমরা হল প্রশাসন উপস্থিত হয়েছি। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত কী নেয়া হবে তার জন্য সকালে আমরা সবাই মিলে আবার বসে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো: রেজাউল ইসলাম মাজেদ বলেন, আমি ঘটনাটা দেখেছি। দুই হলের শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ হলে পাঠিয়েছি। যেহেতু দুই হলের শিক্ষার্থীরা ঘটনার সাথে জড়িয়ে গিয়েছে। তার জন্য প্রেসিডেন্টসহ বসে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) খায়রুল বাসার সাকিব বলেন, আমি ঘটনার সময় বাড়িতে থাকায় ঘটনাস্থলে ছিলাম না। যতটুকু শুনেছি দুই হল শিক্ষার্থীরা ঘটনায় জড়িয়ে পড়েছে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত সংগঠন থেকে নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে কাজী নজরুল হল ছাত্রলীগের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) নাজমুল হাসান পলাশ বলেন, গতকাল রাত থেকে বঙ্গবন্ধুর হলের পোলাপাইন আমাদের হলে এসে হামলা চালায়। আমি হলের সবাইকে ভিতরে রাখার চেষ্টা করেছি। এরকম নৃশংস হামলার বিচার চাই। আমরা আজকে সন্ধ্যার ভিতরে প্রশাসনের নিকট একটি সমাধান চাই।
তবে, প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে দু-হলের ধাওয়া পালটা ধাওয়া চললেও এ ঘটনায় কাজী নজরুল ইসলাম হলের হল প্রশাসন কাউকে দেখা যায়নি। ঘটনার শেষ পর্যায়ে এই হলের হাউজ টিউটর মো: এনামুল হক এসে উপস্থিত হন। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা এক প্রকার অভিভাবকহীন হয়ে আছি। উনাদের ছেলেরা এখানে মার খাচ্ছে অথচ হল প্রশাসনের কেউ নেই এদিকে। এটা দায়িত্ব অবহেলা ছাড়া আর কিছু না।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, উপাচার্যের সাথে হল প্রশাসন ও প্রক্টরিয়াল বডির আলোচনা সভায় সিদ্ধান্তে ছাত্রলীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষে আহতদের কথা বিবেচনায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) আগামী রবিবার ও সোমবার সকল চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত।
তারিন সুমাইয়া
মন্তব্য