অভয়নগর প্রতিনিধি : মনিরুজ্জামান মিল্টন
মায়ের মমতার আঁচল খসে গেছে। নিষ্ঠুর নিয়তির কাছে হার মেনে ক্যান্সারে আক্রান্ত মা বিনা চিকিৎসায় ধুঁকে ধুঁকে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন ছয় মাস হলো। বাবা ভিনদেশী জেলে। পেটের দায়ে প্রতিবেশি দেশ থেকে চোরাই পথে কাপড় আনতে গিয়ে ধরা পড়ে জেলের ঘানি টানছেন। অভাবের তাড়নায় অল্প বয়সেই দু’টি বোনকে পাত্রস্থ করা হয়েছে। তাদেরও সংসারের বাতি নিভে আর জ্বলে।
৮০ বছরের বৃদ্ধা নানী নুরজাহান বেগমকে নিয়ে তাই ১০ বছরের ছোট্ট শিশু নাসিমের সংসার। জীবনের পড়ন্ত বেলায় শিশু নাতিই যার একমাত্র ভরসা। মোঃ নাসিম আলি খান। যশোর সদর উপজেলার বসুন্দিয়া ইউনিয়নের জঙ্গলবাঁধাল গ্রামে ভৈরব নদীর তীর ঘেষে ছোট্ট একটি কুঁড়ে ঘরে বৃদ্ধা নানিকে নিয়ে তার নিদানের সংসার। এলাকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র সে। চাঞ্চল্যতা আর প্রখর বুদ্ধিদীপ্ততায় সে এলাকার সবার পরিচিত মুখ। কেবল লেখাপড়াই নয় খেলাধুলায় নাসিমের জুড়ি নেই। শিশু খেলোয়াড়দের মধ্যে তার ফুটবল নৈপুন্য এলাকাবাসীকে তাক লাগিয়ে দেয়। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! পাড়ার ছেলেরা যখন বুকে স্বপ্ন বেঁধে স্কুলে যায় নাসিম আলি খান তখন বুকে বাদামের নয়তো আমড়ার ঝুঁড়ি ঝুঁলিয়ে বেরিয়ে পড়ে জীবনের রাস্তায়। কখনও বা ভাড়ার ভ্যান নিয়ে দু’হাতে জীবন বেঁধে সড়কে নেমে পড়ে।
জীবিকার তাগিদে ছোট্ট শিশুটি কখনও কখনও নিজের এলাকা ছেড়ে বাদাম/আমড়ার ঝোলা নিয়ে চলে যায় দূরের শহরে। সম্প্রতি নওয়াপাড়া শহরের স্টেশন বাজারে বড় বড় ব্যবসায়ীদের ঘরে ঢু মেরে আমড়ে বেঁচতে আসে সে। আর এখানেই তার সাথে কথা হয় ৮০’র দশকে অভয়নগর উপজেলা ও যশোর জেলা ছাত্রলীগের নেতা শাহিন আকুঞ্জির সাথে। গত শুক্রবার শাহিন আকুঞ্জি এ প্রতিবেদককে সাথে নিয়ে যান শিশু নাসিমের বাড়িতে। সেখানে যেয়ে দেখা যায় এ করুণ চিত্র। এ সময় শাহিন আকুঞ্জি নাসিমের নানীর চিকিৎসার জন্য সহায়তা প্রদান করেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত হন পার্শ্ববর্তী জামদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম তিব্বত হোসেন, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম মিন্টু, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শিক্ষক মোঃ হারুনর-রশীদ, সাবেক ইউপি সদস্য আবু বক্কার সিদ্দিকসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। তারা শিশু নাসিমের লেখাপড়ার ব্যবস্থাসহ অসহায় পরিবারটির পাশে থাকার যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহন করার আশ্বাস দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বসুন্দিয়া ইউপি চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলাম খান রাসেল বলেন, পরিবারটি সম্পর্কে আমি জানি। শিশু নাসিমের মায়ের চিকিৎসায়ও পাশে ছিলাম। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে সকলের সহযোগিতায় ছেলেটি লেখাপড়া শিখে যাতে মানুষ হতে পারে আমরা অবশ্যই সেই চেষ্টা চালিয়ে যাবো। নাসিমের মতো নক্ষত্রেরা ঝরে যাক এটা আমরা কেউ চাইনা।
মন্তব্য