ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, চলতি মাসে এখন পর্যন্ত তার সেনারা প্রায় ৮ হাজার কিলোমিটার এলাকা পুনরুদ্ধার করেছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে দ্রুতগতির পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে রুশ বাহিনীকে হটিয়ে দেওয়ার পর কিইভ মস্কোর নিয়ন্ত্রণে থাকা ইউক্রেইনের সব ভূমি পুনর্দখলে নজর দিলেও ওই লক্ষ্য অর্জনে এখনও ‘দীর্ঘ পথ’ পাড়ি দিতে হবে বলে মনে করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার ভাষণে ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, চলতি মাসে এখন পর্যন্ত তার সেনারা প্রায় ৮ হাজার কিলোমিটার এলাকা পুনরুদ্ধার করেছে। যার প্রায় পুরোটাই উত্তরপূর্বের খারকিভ অঞ্চলের বলে অনুমান বার্তা সংস্থা রয়টার্সের। “মুক্তাঞ্চলের প্রায় অর্ধেকে ‘স্থিতিশীলতা আনার ব্যবস্থা’ সম্পন্ন হয়েছে, বাকিটাতে কাজ চলছে,” বলেছেন জেলেনস্কি। ইউক্রেইন তাদের পাল্টা আক্রমণের মাধ্যমে রুশ বাহিনীকে হটিয়ে যে বিপুল পরিমাণ অংশ পুনর্দখল করেছে বলে দাবি করছে, তার সত্যতা যাচাই করতে পারেনি রয়টার্স।
জেলেনস্কি যত বড় এলাকা পুনরুদ্ধারের কথা বলেছেন, তা মোটামুটি গ্রিক দ্বীপ ক্রেতের আয়তনের সমান। ইউক্রেইন ছয় মাসের যুদ্ধের ‘বাঁক বদলের’ পর্যায়ে পৌঁছেছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে বাইডেন বলেছেন, এমনটা বলা কঠিন। “ইউক্রেইন যে উল্লেখ করার মতো অগ্রগতি অর্জন করেছে তা সুস্পষ্ট। কিন্তু আমার মনে হয় তাদের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে,” বলেছেন তিনি। রাশিয়ার অভিযান শুরু হওয়ার পর ইউক্রেইনকে শত শত কোটি ডলারের অস্ত্র ও অ্ন্যান্য সহায়তা দেওয়া হোয়াইট হাউস এর আগে জানিয়েছিল, ‘আসছে দিনগুলোতে’ তারা সম্ভবত ইউক্রেইনের জন্য নতুন সামরিক সহায়তা প্যাকেজের ঘোষণা দিতে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের এক মুখপাত্র বলেছেন, রুশ বাহিনী বিশেষত ইউক্রেইনের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ শহর খারকিভ ও এর আশপাশের অঞ্চলের প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান ত্যাগ করেছে। শনিবার মস্কো ইউক্রেইনের উত্তরপূর্বে তাদের প্রধান ঘাঁটি ইজিয়ুম ছেড়ে দেয়, একে যুদ্ধের শুরুর দিকে কিইভের আশপাশ থেকে সরে আসার পর রুশ বাহিনীর সবচেয়ে বড় পরাজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
রুশ বাহিনী ইজিয়ুম ছেড়ে দেওয়ার পর গত কয়েকদিনে ইউক্রেইনের সেনারা ওই এলাকার ডজনের ওপর শহর পুনরুদ্ধার করেছে। তবে এরপরও ইউক্রেইনের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চল নিয়ে দেশটির মোট ভূখণ্ডের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ এখনও রাশিয়ার দখলেই আছে; কিইভ এখন দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে পাল্টা-আক্রমণ হানার পরিকল্পনা করছে। ইউক্রেইনের সেনারা আগামী কয়েকদিনের মধ্যে পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ লুহানস্কে ঢুকে পড়বে, এমন সম্ভাবনাও দেখছেন দেশটির প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ওলেকসি আরেস্তোভিচ। লুহানস্ক আর পার্শ্ববর্তী দোনেৎস্ক নিয়েই দনবাস, শিল্পাঞ্চলীয় এ এলাকাটি রাশিয়ার সীমান্তের বেশ কাছে। “লিমানে হামলা হচ্ছে, এরপর সিভারস্কের দিকে সেনারা অগ্রসর হতে পারে,” এর পাশাপাশি সভেতোভো শহরের দখল নিয়ে তীব্র লড়াই হতে পারে বলে ধারণা আরেস্তোভিচের। সভেতোভোতে রাশিয়ার সামরিক সরঞ্জামের ডিপো আছে বলেও ভাষ্য তার। “তাদের সবচেয়ে বেশি ভয় হচ্ছে, আমরা লিমান দখলে নিয়ে লিসিচ্যাংস্ক ও সিভিয়েরোদোনেৎস্কের দিকে অগ্রসর হবো, অর তারা সভেতোভো থেকে কাটা পড়বে,” বলেন আরেস্তোভিচ। তবে রুশপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পরিচালিত দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিকের নেতা ডেনিস পুশিলিন মঙ্গলবার এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, লিমান এখনও তাদের হাতেই আছে। “পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়ে এসেছে। শত্রুরা স্বভাবতই চেষ্টা করছে ছোট ছোট গ্রুপে অগ্রসর হতে, কিন্তু রাশিয়া নেতৃত্বাধীন মিত্র বাহিনী তাদেরকে পুরোপুরি হটিয়ে দিচ্ছে,” বলেছেন তিনি। নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
মন্তব্য