যুগের কণ্ঠস্বর প্রতিবেদক:
রংপুরে মোটরসাইকেল চুরি চক্রের মূল হোতাকে মোটরসাইকেল চুরির সরঞ্জামসহ গ্রেফতার করেছে র্যাব-১৩
মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে র্যাব-১৩ সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মাহমুদ বশির আহমেদ।
জানানো হয়, গত এক মাসে রংপুর মহানগর ও এর আশেপাশের জেলায় বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল চুরি হয়ে যায়। এ ধরনের মোটরসাইকেল চুরির সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যাওয়ায় ঘটনাগুলো নিয়ে র্যাব সহ অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনী গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করে।
এমনি একজন ভিকটিম মোঃ সোহাগ হাসান (৩০) যার কষ্টার্জিত অর্থে কেনা মোটরসাইকেলটি মাত্র তিন মিনিটের ব্যবধানে কয়েকজন অজ্ঞাতনামা যুবক চুরি করে নিয়ে চলে যায়। মোটরসাইকেল স্টার্ট দেওয়ার শব্দ শুনে সে তৎক্ষনিক বাইরে আসে কিন্তু ততক্ষনে চোর চক্রটি মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়।
বিষয়টি নিয়ে পরবর্তীতে তিনি অজ্ঞাতনামা চোরদের আসামী করে হারাগাছ থানায় একটি মামলা দায়ের করে।
পরবর্তীতে উক্ত ঘটনাটি র্যাব-১৩, সিপিএসসি ক্যাম্পের নজরে আসে এবং গোয়েন্দা অনুসন্ধান শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সিপিএসসি, র্যাব-১৩, রংপুর এর একটি আভিযানিক দল গত ১৯ তারিখ রাতে কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট থানার গোবদা হতে আসামী মোঃ ইদুল মিয়া (৩৩) কে গ্রেফতার করেন।
তিনি আরো জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে, আসামী মোঃ ইদুল মিয়া (৩৩) স্বীকার করে যে, সে ও তার অন্য এক সহযোগী মোঃ আলম (৩১) দুজনে মিলে গত ১১ তারিখ দুপুরে আনুমানিক ০২: ৪০ ঘটিকায় বাদী মোঃ সোহাগ হাসান (৩০) এর মোটরসাইকেলটি তার বাড়ির সামনে থেকে চুরি করে অন্য সহযোগী রাজু আহম্মেদ (৩৭) এর কাছে রংপুর মহানগরীর কোতয়ালী থানাধীন কামালকাছনা পূর্ব শালবন এর ভাড়া বাসায় গিয়ে
বুঝিয়ে দিয়ে আসেন।
এছাড়াও সে মোঃ আব্দুল হাকিম মিয়া (৪০) এর কাছেও বিভিন্ন সময় চোরাই মোটরসাইকেলগুলো
বিক্রি করে থাকে। সেই রাজু আহম্মেদ (৩৭). মোঃ ইদুল মিয়া (৩৩)কে মোটরসাইকেল প্রতি ৩০,০০০/-থেকে ৪০,০০০/- হাজার টাকা প্রদান
করে। পরবর্তীতে চোরাই মোটরসাইকেল এর ইঞ্জিন নম্বর, চেসিস নম্বর টেম্পারিং এবং ভূয়া কাগজপত্র তৈরী করে মোটরসাইকেলের মালিক সেজে দ্বিতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করে দিত।
আসামী মোঃ ইদুল মিয়া (৩৩) এর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী অপর আসামী রাজু আহম্মেদ (৩৭), কোতয়ালী থানাধীন পূর্ব শালবন এর ভাড়া বাসার নিচতলা হতে চোরাই মোটরসাইকেলের পর্যাপ্ত আলামত, বিআরটিএ এর জাল সীলমোহর, মোটর সাইকেল লক খোলার মাস্টার কী, বিভিন্ন নামের জাতীয় পরিচয় পত্র, বিভিন্ন ব্যক্তির পাসপোর্ট সাইজের ছবি, বেনামী ব্যক্তির একাধিক সীম, এফিডেভিড সীল মোহর সম্বলিত বাইক বিক্রির তৈরীকৃত ভ‚য়া কাগজপত্র, মোটরসাইকেল এর জাল রেজিস্ট্রেশন কার্ড/স্মার্টকার্ড উদ্ধারসহ চুরি করা মোটরসাইকেল গুলোর মূল কাগজপত্র ও স্মার্টকার্ড উদ্ধার করা হয়।
আসামী মোঃ ইদুল মিয়া (৩৩) এর স্বীকারোক্তিমূলে মোঃ আব্দুল হাকিম মিয়া (৪০) এর নিজ বাড়িতে অভিযান চালিয়ে সদ্য চোরাইকৃত মোটরসাইকেল এর টুল কীট, রেজিস্ট্রেশন নম্বর প্লেটের ব্যাকপার্ট, ইঞ্জিন নম্বর এবং চেসিস নম্বর টেম্পারিং করার কাজে ব্যবহৃত রেতি, মোটরসাইকেল খোলা জোড়া করার যাবতীয় টুলস্ উদ্ধার করা হয় এবং এ সময় আব্দুল হাকিম (৪০) পলাতক ছিল।
আরো জানা যায় যে, আসামী মোঃ ইদুল মিয়া (৩৩), এর ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানায় একটি ডাকাতি মামলার ০১নং আসামী এবং নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলার সদর থানায় মোটরসাইকেল চুরি মামলাসহ সর্বমোট ১০ (দশ)টি মামলা রয়েছে। সম্প্রতি রংপুর মহানগরীতে যে বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা ঘটেছে তার মূল হোতা মোঃ ইদুল মিয়া (৩৩)। চুরি হওয়ার মোটরসাইকেলগুলোর বেশ কয়েকটি অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনী উদ্ধার করেছে কিন্তু মূল হোতা মোঃ ইদুল মিয়া (৩৩) ধরা ছোঁয়ার বাইরে ছিল।
গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ ইদুল মিয়া (৩৩) ও মোঃ রাজু আহম্মেদ (৩৭), তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, সংযুক্ত সীম, চোরাইকৃত একটি এপাচি (১৫০সিসি) নীল সাদা রংয়ের মোটরসাইকেল, মোটরসাইকেল চুরির সরঞ্জামসহ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য হারাগাছ থানা, রংপুর মহানগরীতে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে জানান হয় ।
মন্তব্য