নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি : মোঃ ইমরান হোসেন তালহা,
মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে মশিউর রহমান। ফতুল্লা পূর্ব চানমারি এলাকায় একটি ফার্মেসি দোকান চালায় তিনি। দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধির প্রভাবে সংসারের আয় বাড়াতে, ঔষধ বিক্রির পাশাপাশি মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে ফামের্সিতে। একদিন হঠাৎ মোবাইলের বাটনে চাপ লেগে ভুল নাম্বারে ৩০ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেয় মশিউর। ভুল নাম্বারের জৈনক ব্যাক্তির সাথে টাকা ফেরতের কথা বললে ‘টাকা আসে নাই’ বলে জানান তিনি। এতে বিপাকে পড়ে যায়, চিন্তিত হয়ে মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েন অসহায় মশিউর।
মাসিক ইনকাম দিয়ে যেখানে পরিবার চালাতে হিমশিম খায় মশিউর, সেখানে এতো বড় অংকের টাকা ভর্তুকি দিতে কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে তার জন্য। অবশেষে বন্ধুর সহযোগীতায় দিশেহারা হয়ে পুলিশের কাছে দারস্থ্য হয় তিনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তথ্য আসার পর সাথে সাথেই কোমর বেধে টাকা উদ্ধারে নেমে পড়ে তারা। পুলিশ দীর্ঘ ৪৫দিন বিভিন্ন প্রযুক্তির মাধ্যমে শনাক্ত করে উদ্ধার করে সেই টাকা। এতে যেনো হাঁফ ছেড়ে বাঁচল অসহায় মশিউর।
‘পুলিশ জনগণের বন্ধু’ এই কথটি যেনো আরেকবার প্রমাণ দিলো নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ। পয়তাল্লিশ দিনের টানা পরিশ্রম যেন একটি জলজেন্ত উদাহরন। প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে নেত্রকোণা সদর থানা পুলিশেল সহায়তায় উদ্ধার করেন টাকা।
ভুক্তভোগী ফার্মেসি ব্যবসায়ী মশিউর রহমান দৈনিক যুগের কণ্ঠস্বরকে জানান, একদিন ভুল টাইপ করে অন্য নাম্বারে টাকা পাঠিয়ে দেই। পরে সেই লোককে ফোন দিয়ে টাকা ফেরৎ পাঠাতে বললে, তিনি অস্বিকার করেন। আমি খুব ভেঙ্গে পরেছিলাম। কারণ আমার ইনকাম দিয়ে আমার পরিবার চলে। আমরা পরিবারে বাবা-মাসহ ৪জন সদস্য। ছোট্ট এই ঔষধের দোকানের ইনকাম দিয়ে আমার পুরো পরিবার চলে। ৩০ হাজার টাকা অতো বড় কোন অংকের টাকা না। কিন্তু আমার দিক থেকে বিবেচনা করলে এটা ভর্তুকি দেয়া আমার পক্ষে অসম্ভব ছিলো।
তিনি আরও জানান, আমি মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পরি। পরে আমার এক বন্ধু আমাকে পুলিশের সহায়তা নিতে বলে। আমি পরে জেলা পুলিশের কর্মকতা হাফিজুর স্যারের সাথে কথা বলি। তিনি আমার এই সর্ম্পূন টাকা উদ্ধার করে দেয়। পুলিশের কাছে এমন সহযোগীতা পেয়ে আমি নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার এবং তার টিমের কাছে চির কৃতজ্ঞ।
টাকা উদ্ধারের বিষয়ে জানতে চাইলে উপ-পুলিশ পরিদর্শক (ইনচার্জ, আইসিটি এন্ড মিডিয়া) হাফিজুর রহমান দৈনিক যুগের কণ্ঠস্বরকে জানান, প্রায় সময় আমাদের সাইবার ইউনিটে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আসে আমাদের কাছে। তেমনি দেড় মাস আগে ভুক্তভোগী মশিউর রহমান আমাদের কাছে আসে। তিনি আমাদের জানান, ভুলে তার টাকা অন্য নাম্বারে চলে যায়। আমরা তার অভিযোগের ভিত্তিতে ওই ব্যাক্তিকে শনাক্ত করে টাকা ফেরতের জন্য অনুরোধ করি। কিন্তু তিনি টাকা দিতে অস্বিকার করে। পরে তথ্য প্রযুক্তি মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট বন্ধ করে, নেত্রকোণা সদর থানা পুলিশের সহায়তায় আমরা ওই লোককে শনাক্ত করি। দীর্ঘ ৪৫দিন পর আমরা ওই টাকা উদ্ধার করতে সক্ষম হই।
তিনি আরও জানান, ভুক্তভোগী যারা আছেন আপনাদের কাছে আমাদের অনুরোধ থাকবে আমনাদের বিকাশ, নগদের পিন বা কোন কোর্ড কাউকে দিবেন না। এরপরও যদি কোন এমন ঘটনা ঘটে যায়। তাহলে দ্রুত আমাদের সাথে যোগাযোগ করবেন। আমরা ২৪ ঘন্টা আপনাদের সেবায় নিয়জিত থাকবো।
এদিকে, নেত্রেকোণা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খন্দকার শাকের আহম্মেদ দৈনিক যুগের কণ্ঠস্বরকে জানান, আমাদের কাছে যে কোন জেলা থেকে যে কোন সহযোগীতার জন্য কোন টিম আসলে, আমরা সাথে সাথে দ্রুত তাদের সহযোগীতা করি। নারায়ণগঞ্জ থেকে যে টিম এসেছে আমরা তাদের সহযোগীতা করেছি। ভবিষ্যতে আমরা জনগণের কল্যাণে যে কোন সামাজিক ও মানবিক কাজে পাশে থাকবো।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) গোলাম মোস্তফা রাসেল দৈনিক যুগের কণ্ঠস্বরকে বলেন, ভুক্তভোগী মশিউর রহমান ভুল করে অন্য একটি নাম্বারে টাকা পাঠিয়ে দেয়। পরবর্তীতে সে ওই লোকের কাছে টাকা ফেরৎ চাইলে, ওই লোক টাকা দিতে অসম্মতি জানান। একপার্যায়ে লোকটি ফোন বন্ধ করে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। পরে মশিউর রহমান আমাদের কাছে আসে। আমরা আমাদের ‘সাইবার সিকিউরিটি সেল’ এর মাধ্যমে যেটি দিয়ে আমরা অনলাইনের অপরাধের বিভিন্ন কাজ করে থাকি। ‘সাইবার সিকিউরিটি সেল’ এ কাজ করে আমাদের সাব ইন্সপেক্টর হাফিজ, সে তার সুচারুভাবে কাজটি করে ওই টাকা উদ্ধার করতে সমর্থ হয়েছেন। ইতোমধ্যে ভুক্তভোগী মশিউরের টাকা তার কাছে সহি সালামতে প্রদান করা হয়েছে।
মন্তব্য