যুগের কণ্ঠস্বর প্রতিবেদক:
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেছেন, বিরোধী দলের কর্মসূচিতে হামলা করে সরকার জনগনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। আমরা সমাজের সব শ্রেনীর লোকের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিবো। বলা হচ্ছে নির্দেশ ছাড়া হামলা করা যাবেনা। তাহলে আগের হামলাগুলো নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পালাবার রাস্তা পাবেন না। যাদের আত্মীয় স্বজনকে মেরেছেন তারা ধরবে। আমরা বলে দিবো ধরার জন্য।
বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে গণতন্ত্র মঞ্চের মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সমালোচনা করে তিনি বলেন, যারা রাজনীতি করে তাদের গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দেশের ৯৬ শতাংশ জনগন রাজনীতি করে না, তাদের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তাই আমরা সাংবিধানিক সংস্কারের ব্যপারে কমিশন করে সিদ্ধান্ত নিব এবং সাংবাদিকদের ও পেশাজীবীদের সাথে আলোচনা করব।
তিনি আরো বলেন, হাজার হাজার কোটি টাকা দিযে ইভিএম কিনে কি হবে, দেশে ইভিএম দিয়ে কোন নির্বাচন হবে না। রাষ্ট্র আর রাষ্ট্র নাই, বিরোধী দলের সভা সমিতি মিছিলের গণতান্ত্রিক অধিকারও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, আমাদের উন্নয়ন হচ্ছে কিন্তু উন্নতি হচ্ছে না। নৈতিকতার অবনতি হচ্ছে। আমরা মহা সংকটে আছি। তাই সমস্যা সমাধানে আমাদের রাজনৈতিক ঐক্য প্রয়োজন। সংকট নিরসনে সবার মতামতের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট দফা নির্ধারন করে কাজ করতে হবে। সব রাজনৈতিক দলকে জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করতে হবে।
তিনি বলেন, শুধু নির্বাচনের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে যথেষ্ঠ নয়, এটি নির্ভর করে এর পরে যারা ক্ষমতায় আসবে তারা এই পরিবর্তন কতটুকু চাই তার ওপর নির্ভর করে। তবে নির্বাচনই ক্ষমতা বদলের একমাত্র পথ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই পথ যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে অসাংবিধানিক পন্থা উন্মুক্ত হয়ে যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, যে পুলিশ পুলিশ লীগ করে, যে নির্বাচন কমিশন দলের মতামত নিয়ে সে মতামত পাল্টিয়ে দেয়, তাদের দ্বারা সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। ৯০ সালের আমলে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ছিলনা, আমরা এটি সংযোজন করে দিয়েছি। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ছাড়া কোন বিকল্প নেয়। এতে নির্বাচনের মাধ্যমে একটি ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হয়। তিনি বলেন, আমাদের মূল দাবি হলো নিরেপক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। সব দাবির মধ্যে যেন এই একদফা দাবি যেন বাদ না পড়ে। তিনি দাবি আদায়ে সব দলের ঐক্যমতের উপর জোর দিয় বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ের আন্দোলনে জামায়াতও ছিল তাই সে আন্দোলন সফল হতে পেরেছিল। তিনি আরো বলেন, যথাযথ নির্বাচিত সরকার কোনদিন দেশ বিরোধী সিদ্ধান্ত নিতে পারে না মায়ের ডাকের পক্ষ থেকে নাছরিন জাহান স্মৃতি বলেন, চার বছর আগে আমার স্বামীকে ঘুম করা হয়েছে। আমি র্্যাব, নৌবাহিনী, ডিসি ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে গিয়েছি, কেউ আমার স্বামীর খোঁজ দিতে পারেনি। তারা একটা জিডি পর্যন্ত নিতে চাইনি।
গুম নিয়ে বিবিসিকে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আপনি এখন ও বিবিসিকে বলেন বাংলাদেশে কোন গুম হয় কিনা আপনারা দেখেন। এর মাধ্যমে গুম হওয়া পরিবারকে নিয়ে আপনি উপহাস করেছেন। তিনি আরো বলেন,আপনি মিডিয়ার সামনে হাসাহাসা চেহারা নিয়ে গুম নিয়ে উপহাস করেন। এর শাস্তি কিন্তু আপনাকে পেতেই হবে। জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, দেশে বিগত ৫০ বছরে নূন্যতম প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাটাও বিলোপ হয়ে যাচ্ছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা মানে কোন সমাজের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। তিনি আরো বলেন, দেশে শুধু মনোনিত সরকার দিয়ে সুষ্ঠো নির্বাচন হয়েছিল। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন হতে হবে। তিনি বলেন, একসময় মনে করা হতো, নির্বাচিত সরকারের সময় গণতন্ত্র আসেবে, কিন্তু গণতন্ত্র আসেনাই। আরো বিলুপ্ত হয়েছে। রাষ্ট্র কিছু সম্পদশালী শ্রেণী গড়ে তুলেছে দাবি করে তিনি বলেন, সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তার নিজের অনুগত একটা সম্পদশালী শ্রেণী গড়ে তুলেছে। তারা যা চাচ্ছে সরকার তাই দিয়ে দিচ্ছে।
তিনি ভারতে আদানির উদাহরণ টেনে বলেন, ভারত সরকার রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় আদানিকে বিশ্বের অন্যতম সম্পদশালী ব্যক্তিতে পরিণত করেছে। গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নূর বলেন, নব্বয়ে দশকে আমরা ধোকা খেয়েছি, আয়ূব খান আর এরশাদের সময়ে ধোঁকা খেয়েছি। এখন আমরা আর সেই ধোঁকা খেতে চাই না। মতবিনিময় সভায় গনসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকির সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম সহ গণতন্ত্র মঞ্চের নেতৃবৃন্দ।
মন্তব্য