সাংগঠনিক কার্যক্রম হাতে নিয়ে অক্টোবর থেকে রাজনীতির মাঠ দখলের পরিকল্পনা করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এরই অংশ হিসাবে আগামী মাসে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলন শুরু করতে সংশ্লিষ্ট নেতাদের বলা হয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের জেলা নেতাদের ঢাকায় ডাক পড়ছে অক্টোবরে।
প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠেয় দলের সম্ভাব্য বর্ধিত সভায় অংশ নিতে ডাকা হচ্ছে জেলা নেতাদের। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সভা আয়োজনের জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। দলীয় সংশ্লিষ্ট সূত্র যুগান্তরকে এই তথ্য জানিয়েছে।
দলীয় সূত্র জানায়, পর্যায়ক্রমে সব সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলন নভেম্বর নাগাদ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে আওয়ামী লীগের। সম্মেলনকে ঘিরে এ সময় রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোকে সক্রিয় রাখা হবে।
এভাবে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন পর্যন্ত রাজনীতির মাঠে নেতাকর্মীদের সক্রিয় উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় ক্ষমতাসীনরা। বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচি মোকাবিলায় এমন পরিকল্পনা করছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। দলের সভাপতি শেখ হাসিনা জাতিসংঘের অধিবেশন শেষে দেশে ফিরলে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সম্মেলন এবং বর্ধিত সভার তারিখ নির্ধারণ করা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বুধবার বলেন, সব সংগঠনের সম্মেলন কবে হবে, তা চূড়ান্ত করার ক্ষমতা রয়েছে একমাত্র বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার। দেশে ফিরে তিনিই ঠিক করবেন কোন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলন কবে হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য জানিয়েছেন, এ যাত্রায় আওয়ামী লীগের মেয়াদোত্তীর্ণ তিনটি সহযোগী ও একটি ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রাথমিকভাবে এই চার সংগঠনের সম্মেলনের তারিখ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতি নিয়ে অক্টোবরের শেষদিকে পর্যায়ক্রমে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম চার সংগঠনের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
লন্ডনযাত্রার আগে তিনি আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সম্মেলনের প্রস্তুতি নিতে বলে গেছেন। সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সম্মেলন অক্টোবরে শুরু হলেও তা নভেম্বর পর্যন্ত গড়াবে। শুরুতে ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ এবং তাঁতী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭ মে অনুষ্ঠিত দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সম্মেলন আয়োজনের নির্দেশ দেন। এর তিন দিন পর ১০ মে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর যৌথ সভায় ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগ, যুব মহিলা লীগ ও মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন আয়োজনে দলীয় সভাপতির নির্দেশ স্মরণ করিয়ে দেন। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম তিন সংগঠনের নেতাদের দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলে তারিখ চূড়ান্ত করার কথা বলেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত সম্মেলনের উদ্যোগে ভাটা পড়ে।
আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় তিন বছর পর। মহিলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয় ২০১৭ সালের ৪ মার্চ। সম্মেলনে সাফিয়া খাতুন সভাপতি ও মাহমুদা বেগম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিন বছর মেয়াদি এই সংগঠনের কমিটির মেয়াদ শেষ হয় ২০২০ সালের ৪ মার্চ।
জানতে চাইলে মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম বুধবার বলেন, সম্মেলন করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি আমরা নিয়েছি। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সময় দিলেই এ আয়োজন সম্পন্ন করতে পারব।
যুব মহিলা লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৭ সালের ১১ মার্চ। এতে নাজমা আক্তার সভাপতি ও অপু উকিল সাধারণ সম্পাদক পুনর্নির্বাচিত হন। তিন বছর মেয়াদি যুব মহিলা লীগের এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২০ সালের ১১ মার্চ।
যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল বুধবার বলেন, আমরা সম্মেলনের জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। তারিখ নির্ধারণের জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তিনি যেদিন সম্মেলন করতে বলবেন, আমরা সেদিনই সম্মেলন আয়োজন করতে পারব।
আওয়ামী লীগের আরেক সহযোগী সংগঠন তাঁতী লীগের সম্মেলন হয় ২০১৭ সালের ১৯ মার্চ। তিন বছর মেয়াদি এই সংগঠনের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২০ সালের ১৯ মার্চ। তাঁতী লীগ বরাবরই দুর্বল সাংগঠনিক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। তারপরও গঠনতান্ত্রিক নিয়মে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন তাঁতী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় এবং একটি কেন্দ্রীয় কমিটি থাকে।
আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দুই বছর অন্তর এই সংগঠনের সম্মেলন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ছাত্রলীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের মে মাসে। রেজওয়ানুল হক চৌধুরী সংগঠনটির সভাপতি ও গোলাম রাব্বানী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ওই দুজনকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
পরবর্তী সময়ে ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য। ২০২০ সালের মে মাসে এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়। ছাত্রলীগের বর্তমান নেতৃত্ব চরমভাবে সমালোচিত হওয়ায় এই ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলন আগেই করতে চায় আওয়ামী লীগ।
এদিকে চার বছর পর আওয়ামী লীগের জেলা নেতাদের ঢাকায় ডাক পড়ছে। সেপ্টেম্বরে গণভবনে বর্ধিত সভা আয়োজনের প্রস্তুতি থাকলেও বিভিন্ন কারণে তা পিছিয়ে দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগের আসন্ন জাতীয় কাউন্সিল ও পরবর্তী সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে বর্ধিত সভায় তৃণমূল নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেওয়ার কথা দলের সভাপতি শেখ হাসিনার। তিনি দলীয় সংসদ-সদস্য এবং তৃণমূলে আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংগঠনিক অবস্থা সম্পর্কে জেলা নেতাদের কাছ থেকে জানতে চাইবেন বলে জানা গেছে। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ২৩ জুন প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মন্তব্য