যুগের কণ্ঠস্বর প্রতিবেদক:
রাজধানীর শাহ আলী এলাকার চাঞ্চল্যকর প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে বাসু হত্যা মামলার প্রধান আসামী দীর্ঘ ১২ বছরের পলাতক মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত, হত্যা, ডাকাতিসহ একাধিক মামলার আসামী আলকেস’কে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৪। বরিশাল মহানগরী এলাকায় শুক্রবার র্যাব-৪ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ সব তথ্য জানান র্যাব-৪ এর অধিনায়ক ডিআইজি মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক।
তিনি বলেন, আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে ও ঘটনার বিবরণে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ আলকেস, মামলার বাদী চিনু মিয়া ও ভিকটিম বাসু মিয়া (৪৮) একই এলাকার বাসিন্দা। মামলার বাদী চিনু মিয়া ভিকটিম বাসু মিয়ার আপন ছোট ভাই। গ্রেফতারকৃত আসামী রাজধানীর শাহ আলী থানাধীন চটবাড়ী নবাবেরবাগ এলাকার ২০০ সদস্য বিশিষ্ট একটি মৎস্যজীবী সমিতির সদস্য। ভিকটিম বাসু মিয়া ও বাদী চিনু মিয়ার চটবাড়ী এলাকায় ১০ শতাংশের একটি পৈত্রিক দখলীয় সম্পত্তি ছিল। জমিটি আজগর আলীর কাছে বাৎসরিক ভিত্তিতে লীজ দেওয়া ছিল। কিন্তু একসময় আসামী আজগর আলী প্রতারণামূলক জাল দলিল করে নিজের নামে নিয়ে নেয় এবং পরবর্তীতে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে ২০১০ সালে সমীতির নামে হস্তান্তর করে। এতে করে উক্ত জমি মালিকানা নিয়ে মামলার বাদী চিনু মিয়া এবং ভিকটিম বাসু মিয়ার সাথে মৎসজীবি সমিতীর বিরোধ সৃষ্টি হয়। তর্কিত জমিটি প্রকৃতপক্ষে মূল মালিক চিনু মিয়া ও বাসু মিয়া। সমিতির লোকজনের সংখ্যা বেশি হওয়ায় তারা অর্থাৎ এই মামলার আসামী আলকেসসহ অন্যান্য আসামী আজগর, গিয়াস উদ্দিন, সুানু মিয়া, জিন্নাত, রুমা, কদর আলীদের নেতৃত্বে উক্ত সমিতির নামে রাখা জমি জোরপূর্বক দখল করে জায়গাটিতে সীমানা প্রাচীর তৈরি করে ফেলে। তখন এই মামলার বাদী চিনু মিয়া ও ভিকটিম বাসু মিয়া আসামীদের সাথে বিরোধে না জড়িয়ে বিজ্ঞ সিভিল আদালতে মামলা দায়ের করার পর প্রায় দুই বছর পর বিজ্ঞ আদালত বাদী চিনু মিয়া ও বাসু মিয়ার পক্ষে রায় প্রদান করে। পরবর্তীতে মামলার বাদী এবং ভিকটিম বিজ্ঞ আদালতের রায় পেয়ে উক্ত জমিতে ২০১২ সালের শুরুতে বিল্ডিং নির্মাণ করা শুরু করে ১ম তলার ছাদ পর্যন্ত নির্মাণ কাজ সম্পূর্ন হয়।
তিনি আরো বলেন, ঘটনার দিন ১৪ মে বিকেল ৫ ঘটিকার সময় বাদীর চিনু মিয়ার ভাই ভিকটিম বাসু নবনির্মিত বিল্ডিংয়ের ছাদে পানি দেয়ার জন্য একজন কর্মচারী নিয়ে যায়। তখন উক্ত সমিতির সদস্যরা অর্থাৎ এই মামলার এজাহারনামীয় আসামী আলকেস, আজগর, রাজু, খলিল, সেলিম, কদর আলী, লেদুসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৬/৭ জন আসামী আগ্নেয়াস্ত্র, দেশীয় ধারালো অস্ত্র ও লোহার রড নিয়ে আক্রমণ করে। আক্রমনের এক পর্যায়ে গ্রেফতারকৃত আসামী আলকেস তার কাছে থাকা অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা কয়েক রাউন্ড গুলি করলে ভিকটিম বাসুর মাথার বাম পাশে লেগে ডান পাশ দিয়ে বের হয়ে গেলে ভিকটিম বাসু ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করে। এই ঘটনায় ভিকটিমের ভাই চিনু মিয়া গ্রেফতারকৃত আসামী আলকেসসহ ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরো ৬/৭ জন আসামীর বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগরীর শাহ আলী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে আলকেসসহ অধিকাংশ আসামিদের পুলিশ গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করে। পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন সময়ে আসামী আলকেস নিজেকে সম্পৃক্ত করে অন্যান্য আসামীর নাম উল্লেখপূর্বক বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। কিন্তু আসামীরা চার মাস কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পেলে অন্যান্য আসামিরা আদালতে হাজিরা দিলেও আসামী আলকেস জামিন নিয়ে আত্মগোপনে চলে যায় এবং এই মামলায় আর কখনো সে হাজিরা দেয়নি।
মামলাটি তদন্ত করে তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে এজাহারনামীয় ১৩ জন এবং তদন্তে প্রাপ্ত একজনসহ মোট ১৪ জনের নামে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। আদালত পর্যাপ্ত স্বাক্ষ্য প্রমাণের উপর ভিত্তি করে ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর আসামি মো. আলকেস, আজগর আলী, খলিল, সেলিম ও রাজুসহ মোট পাঁচ জন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন, এবং আসামি কদর আলী ও লেদু’কে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন। জামিনে থাকা অবস্থায় গ্রেপ্তারকৃত আসামি আলকেস ওই হত্যাকাণ্ডের কথা শিকার করেন।
গ্রেপ্তারকৃত আসামির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
মন্তব্য