কুবি প্রতিনিধি: হাছিবুল ইসলাম সবুজ,
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীতে ক্লাস নেয়া, গণমাধ্যমের গাড়ি ভাংচুর, ছাত্রলীগ নেতাদের মারধরসহ নানা অভিযোগ গত ৬ মাসে ৮টি গঠিত তদন্ত কমিটির ছয়টিই আলোর মুখ দেখিনি। শুধুমাত্র তদন্ত কমিটি গঠন করেই দায়িত্ব শেষ করেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে সৃষ্টি হচ্ছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি, বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২তম জন্মবার্ষিকীতে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জসিম উদ্দিন ক্লাস নেওয়ার ঘটনায় রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম রায়হান উদ্দিনকে আহবায়ক এবং ইংরেজি বিভাগের সভাপতি ড. বনানী বিশ্বাসকে সদস্য ও তৎকালীন ডেপুটি রেজিস্ট্রার আমিরুল হক চৌধুরীকে সদস্য সচিব করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি গঠনের ৬ মাসেও ব্যবস্থা নিতে পারেনি প্রশাসন। এ বিষয়ে জানতে ড. রায়হানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও কাজী নজরুল ইসলাম হলের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে গত দুইদিন ধরে চলা সংঘর্ষের ঘটনায় সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. শেখ মকছেদুর রহমানকে আহ্বায়ক এবং প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকীকে সদস্যসচিব করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ঘটনায় সাতদিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে গত ৬ মাসে পাচঁ ঘটনায় তদন্ত কমিটিই গঠন করেনি প্রশাসন। এর মধ্যে গত ১১ এপ্রিল সামাজিক বিজ্ঞান এবং কলা ও মানবিক অনুষদের নিচে ময়লার স্তূপে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি পড়ে থাকতে দেখা যায়। গত ২১ জুলাই উপাচার্যের কক্ষে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে এক সাংবাদিককে হেনস্তা করে বের করে দেন সহকারী প্রক্টর মাহাবুবুল হক ভূইঁয়া। এ ঘটনায় অভিযোগ দিতে গেলে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেনি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন। ১৪ মার্চ শারীরিক শিক্ষা দপ্তরের উপ-পরিচালক মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অশোভন আচরণ করার লিখিত অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। সে ঘটনায়ও কোন ধরণের ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। এছাড়া ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে নারী শিক্ষার্থীদের হেনস্তার অভিযোগ উঠলেও ব্যবস্থা নেয়নি।
একাদিক শিক্ষার্থি মনে করেন এভাবে যদি তদন্ত কমিটি করেই দায়িত্ব শেষ করা ও একাধিক ঘটনায় কোন ধরণের ব্যবস্থা না নেওয়ায় বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হবে বলে মনে করেন শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। এতে অপরাধের প্রবনতা বৃদ্ধি পাবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিনিয়র শিক্ষক বলেন, এখানে বিচারহীনতার সংস্কৃতিটা প্রকট। কারণ তদন্ত কমিটি করা হয়, কিন্তু অদৃশ্য কারণে রিপোর্ট দেয়া হয়না। প্রশাসন কোন ঘটনাকে প্রশমনের জন্য কমিটি করে। দীর্ঘসূত্রিতার কারণে বিচার নিয়ে শঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে।
ট্রেজারার ড. আসাদুজ্জামান বলেন, আমি মনে করি তদন্ত কমিটি হলে সেটির সুরহা করা উচিত এবং সেখানে সবার সহায়তা দরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে, একাডেমিক পরিবেশ রক্ষা করতে যেকোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হোক না কেন সত্য তথ্য উদঘাটন করতে এবং যারা দোষী তাদের সনাক্ত করতে তদন্ত কমিটি করা হয়। চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে সে যদি দোষী হয় তাহলে শাস্তি, যদি নির্দোষ হয় তাহলে যারা হয়রানী করে তাদের সর্তকবাণী দেওয়া হোক। বিচার না হলে অপরাধ বাড়ে, অপরাধী আরও অপরাধ করার সাহস পাবে।
উপ-উপাচার্য ড. হুমায়ুন কবির বলেন, একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলে অবশ্যই সেটার প্রতিবেদন জমা দিতে হয়। কিন্তু প্রশাসনের যদি সেটি আদায় করে নিতে না পারে তাহলে প্রশাসনের ব্যর্থতা। যদি তদন্ত আলোর মুখ না দেখে সেখানে বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হবেই। প্রশাসন কঠোর অবস্থানে না গেলে অপরাধ প্রবণতা বাড়বে।
এবিষয়ে কথা বলতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল মঈনের সাথে দেখা করতে গেলে তিনি সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে রাজী হননি। তিনি বলেন, আমি তোমাদের কোন বক্তব্য দিবনা। তোমার যা মন চায় লিখ। পরে তাঁর মুঠোফোনে ক্ষুদেবার্তা পাঠালেও তিনি উত্তর দেননি।
মন্তব্য